অঙ্কিতা পাল
পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন। সদ্য প্রকাশিত (২০১৯-২০) বাঘ সুমারির রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের এই সুন্দরবনে রয়্যাল বেঙ্গল বাঘের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯৬। এদের মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক বাঘিনীর সংখ্যা ৪৩। আর শাবকের সংখ্যা ১১। ২০১৮-১৯ এর বাঘ সুমারিতে বাঘের সংখ্যা ছিল ৮৮। সংখ্যার নিরিখে ৮টি আমাদের কাছে খুব একটা বড় কিছু না মনে হলেও বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই সংখ্যা তাৎপর্যপূর্ণ। ২০১৭-১৮ এর রিপোর্ট অনুযায়ী, আগের বছরে বাঘ বৃদ্ধির সংখ্যা ছিল মোটে ১। স্বাভাবিকভাবেই এতে বন দপ্তরের অবদান অনস্বীকার্য। রাজ্যের বন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় আশাপ্রকাশ করে বলেছেন, এই সংখ্যা খুব তাড়াতাড়ি সেঞ্চুরিতে পরিণত হবে। তবে হঠাৎ করে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ কি?
এই বিষয়ে বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাঘেরা যেখানে থাকে সেই জায়গার উন্নতির কথা মাথায় রেখে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের আচ্ছাদন বাড়ানোর জন্য বন বিভাগের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফলে এখন বাঘেরা আরও বেশি জায়গা নিয়ে থাকতে পারছে। লকডাউন চলাকালীন জঙ্গলে বাঘের জন্য সংরক্ষিত এলাকায় লাগানো ক্যামেরায় বাঘেদের বেশি করে দেখা যাচ্ছে। আগে যেখানে দিনে মাত্র ১ থেকে ২ বার বাঘেরা ক্যামেরাবন্দী হত, এখন সেখানে দিনে ৬-৭ বার বাঘেদের দেখা যাচ্ছে।
রয়্যাল বেঙ্গল বৃদ্ধির রহস্য
বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাঘের মৃত্যুর সংখ্যা আগের তুলনায় কমেছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে ভারতে মোট ৯৫ টি বাঘ মারা গেছে, যেখানে ২০১৮ সালে মৃত বাঘের সংখ্যা ১০০। কমেছে চোরা শিকারের হারও। এক্ষেত্রে অবদান রয়েছে উপকূল রক্ষী বাহিনী, বিএসএফ, বনদপ্তর, পুলিশ এবং বন রক্ষা কমিটির। বাঘেদের সুরক্ষা প্রদানের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তাঁদের তরফে। চোরাশিকার রুখতে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে আরও ভালোভাবে নজরদারি সম্ভব হয়েছে। টহলদারির জন্য ভারতের প্রতিটি টাইগার রিজার্ভে এমস্ট্রিপস (মনিটরিং সিস্টেম ফর টাইগারস-ইনসেন্টিভ প্রোটেকশন অ্যান্ড ইকোলজিকাল স্টেটাস) ব্যবহার করা হচ্ছে। বন বিভাগের তরফে প্রচুর ট্র্যাপ ক্যামেরা ব্যবহার করে নজরদারি চালু রাখা হয়েছে।
সুন্দরবনে বাঘ শাবকের সংখ্যাও বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শাবকের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি না হলে বাঘিনী প্রজননের চেষ্টা করেনা। তাঁদের মতে সুন্দরবনে বাঘের প্রজননের জন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছে। তাই প্রজননের সংখ্যাও বেড়েছে। বাঘ সুমারিতে পদ্ধতিগত উন্নতিসাধন বাঘের সংখ্যা বাড়ার অন্যতম কারণ। আগে বাঘের পায়ের ছাপ দেখে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হত। যা বেশিরভাগ সময়ই নির্ভুল হওয়া অসম্ভব। এখন ট্র্যাপ ক্যামেরা ও জেনেটিক্সের সাহায্যে নির্ভুল পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে যেদিন থেকে লকডাউন জারি করা হয়েছে, আমরা একের পর এক দুঃসংবাদে পেয়েছি। তবে এরই মাঝে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির খবরটি স্বস্তিদায়ক। একটা বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠে খাদ্য খাদক সম্পর্ক নিয়েই। কিছু বছর আগে যেখানে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের অস্তিত্ব সংকটময় ছিল সেখানে এই পরিস্থিতিতে তার সংখ্যা বৃদ্ধি আশার আলো দেখায় বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখার।