সাগ্নিক চৌধুরী
পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ গণতন্ত্রের মধ্যে অন্যতম হিসেবে ভারতবর্ষকে বলা হয়ে থাকে। কারণ হিসেবে কেউ কেউ বলেন দীর্ঘদিন ব্রিটিশ শাসনের পর স্বাধীনতা আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত দেশ হল ভারত। এখানে জনগণের শাসন রয়েছে। আছে এমন এক সরকার যার প্রতিনিধিরা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত এবং সেই হিসেবে ধরে নেওয়া হয় তারা কাজ করবেন মানুষের হয়ে এবং মানুষের স্বার্থে। সংবিধান বলে এটিকে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন। কিন্তু কী এই গণতন্ত্র, খায় নাকি মাথায় মাখে সেই বিষয়ে প্রশ্ন আপনাদের অনেকেরই রাতে ঘুম কেড়ে নেবে। লাল্টুদার চায়ের দোকানে বসে পাড়ার বিল্টু কাকু লাল চায়ে বিস্কুট ডুবিয়ে হঠাৎ বলে উঠলেন, সরকার যা করছে একদম ঠিক করছে, শালা বাংলাদেশী মাল এদেশে এসে আমাদের ঘাড়ে উঠে বসেছে, এদের সরিয়ে দিলে একটা ভাল কিছু হবে। পাশে বসে রাজু বলল কী যে বল কাকু, এতদিন ধরে এরা এদেশে আসছে, হঠাৎ করে একদিন সকালে উঠে, সরকার এদের বলে দেবে ‘অনেক হয়েছে এবার আপনারা আসতে পারেন’ এটা কেমন কথা হল! এদের আলোচনা প্রায় মধ্য গগনে এমন সময় সত্য কাকু, খবরের কাগজ থেকে মুখ তুলে বললে তোমরা CAB নিয়ে কথা বলছ? ওদিক থেকে চায়ের দোকানের কোণ থেকে বিড়ি ধরিয়ে হারান দা বলে, এই দেখো কথা হচ্ছিল নাগরিকত্ব নিয়ে (উনি মনে হয় কানে কম শোনেন), সত্য দা, ওলা, উবের বা টাক্সি নিয়ে নয় বাংলাদেশীদের বের করে দেওয়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সত্য কাকু, (লাফিয়ে উঠে) ওরে অশিক্ষিতের দল CAB মানে Citizen Amendment Bill অর্থাৎ এই বিলের মাধ্যমে কারা এদেশে উদ্বাস্তু সেটা ঠিক করা হবে। সবই তো বুঝলাম কিন্তু যাদের কোনো দ্যাশ নাই তাদের কী হইব? বলে উঠল হরেন দা। একটা বড় নিশ্বাস ছেড়ে সত্য কাকু বললেন, জানিনা রে।
যদিও বিষয়টা অনেকটা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জঙ্গি খুঁজে বের করে মারার মতন হয়ে উঠেছে এই অনাগরিকদের খুঁজে বের করে তাদের দেশ থেকে সরানোর এই পরিকল্পনা। এই হল দেশের নাগরিক গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ। সত্যিই বলতে কি কাকা, আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক বা সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত বলে যেসব জ্ঞানের বাণীর পুদিনার খাওয়ানো হয় তা হল ভিতরের পচে যাওয়া সিস্টেমের দুর্গন্ধ থেকে বাঁচানোর এক মুখশুদ্ধি মাত্র। আসল সত্যিটা আপনিও জানেন আমরাও জানি, হীরকরাজা ঠান্ডা ঘরে বসে মন্ত্রী পরিষদ নিয়ে এই সব সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। আর সভাকবি সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্লোগান বানান এবং জাদুকর তৈরি করেন টনিক। একবার খেলেই আপনি হয়ে যাবেন রামভক্ত আর বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়বেন উদ্বাস্তু বধ করতে বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে। রাতের অন্ধকারে তাদের জামা তুলে, হাত বুলিয়ে ভোটার কার্ড যাচাই করতে। এটাই তো গণতন্ত্রের নমুনা স্যার! এই সব ক্যাডারদেরই তো চাই মোল্লা বিজয় করতে। ও হ্যাঁ, একটা কথা তো ভুলেই গেছিলাম যে এই ক্যাম্পে যে শুধুমাত্র হিন্দু যদি থাকে তাহলে রক্ষা হলেও হতে পারে কিন্তু যদি কোনও পাকিস্তানি থাকে তাহলে ১৯৬২, ১৯৭১, ১৯৯২ সালের ইতিহাসের ঢেকুর তুলিয়ে তলোয়ার নিয়ে বেরিয়ে পড়লেও পড়তে পারে। এই আমাদের দেশ এবং এই হল আমদের হনতন্ত্র ওহো সরি গণতন্ত্র।
আসলে কী জানেন তো স্যার, আমরা যতই দিনরাত ‘জন গণ মন অধিনায়কও জয় হে’ করি না কেন? সবটাই একটা হাওয়া ভরা চিপসের প্যাকেটের মতন, দিনের শেষে আমরা ধোকা ছাড়া আর কিছুই পাব না। অনাগরিকদের ডিটেনশন ক্যাম্পে কত মানুষ নাকি অজানা কারণে মারা যাচ্ছেন, অনেক মেয়ে নাকি সেখান থেকে পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। আর তারপর ও স্যার আপনি তাদের বেশ্যা বলবেন? ওই যে পতিতালয় আর নেতৃবর্গদের মুজরা যে মিডিয়া দেখিয়ে টিআরপি আকাশে তুলছে সেইসব দেখেও আপনি গান্ধীজির তিনটি বাঁদর হয়ে থাকবেন তো!
লেখকের নিজস্ব মতামত। এর জন্য দৈনিক সুন্দরবন কোনোভাবেই দায়ী নয়।