পিয়ালী মুখার্জী
সাহিত্যচর্চা, ফুটবল, আড্ডা সহ আর যে বিষয়টির জন্য বাঙালি গোটা বিশ্বে পরিচিত, তা হল খাবার! বাঙালি মানেই খাদ্য রসিক। রসগোল্লা থেকে কচি পাঁঠার ঝোল, এ স্বাদ বাঙালি ছাড়া গোটা ভারতে আর ভালো কেই বা বুঝতে পারে। খাবারের দিক থেকে বাঙালি বরাবর উদার। এক সময় যে শহরে কচুরি, সিঙাড়া রমরমিয়ে বিক্রি হত, সেখানে গজিয়ে উঠল পিৎজা, পাস্তা, মোমোর আউটলেট। তবে গ্লোবাল বাঙালি যতই পিৎজা-স্যান্ডউইচ খাক না কেন, নাড়ির টান তার এখনও যায়নি। এরকমই ১৫টি খাবার রয়েছে, যা বাঙালি মাত্রই পছন্দ করে। অন্তত অধিকাংশ বাঙালি যে এই খাবারগুলি পছন্দ করেন, তা জোর দিয়ে বলা যায়।
১. আলু পোস্ত
বাঙালিরা পোস্ত একটু বেশিই পছন্দ করেন। এক বাটি আলু পোস্ত আর একটা কাঁচা লঙ্কা দিয়ে, এক থালা গরম ভাত সাবাড় করে দেওয়াটা কোনো ব্যাপারই নয়! আলু, পেঁয়াজ, হলুদ, অল্প লঙ্কা গুঁড়ো আর একটু পোস্ত বাটা শুধু পেট নয়, আপনার মনকেও ভালো করে দেবে। আলু পোস্ত বাঙালিদের পছন্দের খাদ্যগুলির একটি অন্যতম পদ।
২. ইলিশ মাছের ঝোল
ইলিশ-চিংড়ি নিয়ে ঘটি বনাম বাঙাল যতই লড়াই হোক, এই দুটি মাছের স্বাদ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই! ঘটি-বাঙাল নির্বিশেষে সবাই ইলিশ ও চিংড়ির পদ চেটেপুটে খেতে পছন্দ করেন। সর্ষে ইলিশ, ইলিশ ভাপা সহ ইলিশের পাতলা ঝোলও বেশ জনপ্রিয়। হলুদ, লঙ্কা গুঁড়ো বা কাঁচালঙ্কা, সঙ্গে একটু সর্ষে দিয়ে ইলিশের এই ঝোল অমৃত সমান মনে হবে।
৩. শুক্তো
বাঙালি মানেই শুধু মাছ নয়। বাঙালির মৎসপ্রেমের কথা সবাই জানে। কিন্তু এমন কিছু রেসিপি আছে, যেগুলিতে মাছ না থাকলেও সেগুলি অত্যন্ত জনপ্রিয়। এর মধ্যে অন্যতম হল শুক্তো। শুক্তো মূলত বেগুন, কুমড়ো, বড়ি, সজনে ডাঁটা, উচ্ছের মতো নানা সব্জি দিয়ে তৈরি করা হয়। এতে অল্প ঝোল থাকে। গরম ভাতের সঙ্গে খেতে দারুণ লাগে।
৪. সন্দেশ
পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে জনপ্রিয় মিষ্টি হল সন্দেশ। স্বাদে অপূর্ব এই মিষ্টি খোয়া এবং কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে তৈরি করা হয়। সন্দেশ খুব মিষ্টিও নয়। ফলে যারা মিষ্টি খুব একটা পছন্দ করেন না, তারাও এটি খেতে ভালোবাসেন। তাই সন্দেশ অবশ্যই চেখে দেখা উচিত।
৫. মাটন বিরিয়ানি
সারা দেশে বিরিয়ানির নানা প্রকারভেদ আছে। বাংলাতেও বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম বিরিয়ানি পাওয়া যায়। বাংলায় সবচেয়ে জনপ্রিয় বিরিয়ানির মধ্যে অন্যতম হল মাটন বিরিয়ানি। মশলার স্নিগ্ধ সৌরভ, সঙ্গে আলু এবং মাটনের টুকরো মুখে গেলে মনে হবে আপনি স্বর্গে আছেন!
৬. আম পোড়া শরবত
ঠান্ডা জল, পোড়া আমের কাথ্ এবং চিনির মিশ্রণে প্রস্তুত করা এই পানীয় বাংলায় অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিশেষত গরমকালে পেট ঠান্ডা রাখতে আম পোড়া শরবত মাস্ট। কাঁচা আমকে ছাল সমেত হালকা করে পোড়ানো হয়। ফলে এই শরবতে একটা পোড়া পোড়া ফ্লেভার পাওয়া যায়। বহুজাতিক সংস্থার ঠান্ডা পানীয়র তুলনায় এক গ্লাস আম পোড়া শরবত আপনাকে একটু বেশি হলেও স্বস্তি যোগাবে!
৭. ট্যাংরা মাছের ঝোল
নাম শুনলেই অনেকের জিভে জল চলে আসে। বাঙালিদের ঘরে ঘরে যে কয়েকটি মাছ নিয়মিত আসে তাদের মধ্যে অন্যতম হল ট্যাংরা। ট্যাংরা হল মিষ্টি জলের মাছ। পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা লঙ্কা, হলুদ গুঁড়ো দিয়ে ট্যাংরা মাছের পাতলা ঝোল অন্যতম জনপ্রিয় পদ।
৮. আলুর দম
শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা – বছরের যে কোনো সময় আলুর দম প্রায় সব বাঙালি বাড়িতেই রান্না করা হয়। ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার, সঙ্গে লুচি, রুটি বা পরোটা, আলুর দম যেন সব কিছুতেই সুপারহিট! তবে শীতকালে আলুর দমের প্রতি বাঙালির প্রেমটা যেন একটু বেশি হলেও বেড়ে যায়।
৯. লুচি
ব্রেকফাস্ট হোক বা টিফিন বা ডিনার, লুচি সব কিছুতেই বাঙালির সঙ্গী হয়ে উঠেছে। ময়দায় তৈরি রুটির ছোটো ভাইয়ের মতো দেখতে লুচি আলুর দম বা যে কোনো সব্জি বা ছোলার ডালের সঙ্গে খেতে বাঙালিরা পছন্দ করেন।
১০. ছোলার ডাল
বাঙালিদের রান্না ঘরে ডাল একটি আবশ্যিক উপাদান। এর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় হল ছোলার ডাল। মূলত লুচির সঙ্গে ছোলার ডাল খাওয়ার চল বেশি। তেজপাতা, নারকেল, কাঁচা লঙ্কা, শুকনো লঙ্কা, সাদা জিরে-ফোড়ন, হলুদ, চিনি আর স্বাদ অনুযায়ী লবন দিয়ে এই পদটি তৈরি করা হয়।
১১. লাউ ঘন্ট
লাউয়ের সঙ্গে অরহড় ডাল, বড়ি এবং অল্প কিছু মশলা দিয়ে লাউ ঘন্ট তৈরি করা হয়। এটি খুব মশলাদার নয়, তবুও খুব সুস্বাদু হয়। ফলে পেটের জন্য ভালো। এই পদটি বাঙালিরা ভাতের সঙ্গে খেতে খুবই পছন্দ করেন।
১২. মোচার ঘন্ট
মোচার ঘন্ট হল আর একটি খুব সুস্বাদু খাবার, যেটি তৈরি করা হয় মোচা, আলু, নারকেল কুচি, জিরে, ঘি, অল্প চিনি এবং তেজপাতা দিয়ে। মিষ্টিভাব এবং মশলার সুগন্ধ এই পদটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। মোচার ঘন্ট একটি খাঁটি নিরামিষ খাবার, যা ফের প্রমাণ করে যে মাছ-মাংসের বাইরেও বাঙালি খাবার বোঝে!
১৩. কষা মাংস
এটি মূলত পাঁঠার মাংস দিয়ে তৈরি করা হয়। বেশ মশলাদার খাবার। একটু গাঢ় ঝোল বা গ্রেভি থাকে। কষা মাংসে আদা, রসুন, পেঁয়াজ, দারচিনি আবশ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয়। কষা মাংসের গন্ধই আপনাকে পাগল করে দিতে পারে! স্বাদেও অপূর্ব।
১৪. মিষ্টি দই
মিষ্টি দই মূলত বাঙালিদের খাবারের শেষ পাতে খাওয়া হয়। এখন সারা দেশে পাওয়া গেলেও বাংলাতেই মিষ্টি দইয়ের উদ্ভব হয়েছিল।
১৫. পাটিসাপ্টা
বাঙালিদের আর একটি পছন্দের মিষ্টি পদ হল পাটিসাপ্টা। এটি তৈরি করা হয় চালের গুঁড়ো, কুরানো নারকেল ও গুড় দিয়ে তৈরি পুর অথবা খোয়া দিয়ে। আপনি মিষ্টি পছন্দ করুন বা নাই করুন, পাটিসাপ্টা অবশ্যই একবার খেয়ে দেখুন!