অ্যান্টনি সরকার
ব্যাপক খিল্লি করা ছাড়া সারাদিন আপনি আর কী করেন? উহু, এটা কোনো প্রশ্ন নয়। বাক্যের পরে ওই জিজ্ঞাসা চিহ্নটা নেহাতই ভুলবশত। আসলে ইহা হয় একটি স্টেটমেন্ট। আপনি দিনমান খিল্লি ছাড়া আর কিছুই করেন না। আর দেখুন ঠিক এই পয়েন্টেই আসে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের উপকারিতা। জুকুসোনার বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যই হল আপনাকে লাগাতার খোরাক জুগিয়ে যাওয়া। বিশ্বাস না হলে ওনার সেক্রেটারিকে ডেকে শুধাতে পারেন। ইহাই সত্য।
নয়তো, এই যে আপনাকে একেকদিন ভোরবেলা একেক রকম খোরাক চোখের পাতা না ফেলে দিয়ে যাচ্ছে ফেসবুক, কৃতজ্ঞ বোধ করুন। আপাতত সেই তালিকায় নতুন সংযোজন-গোরুর কেল্লা। থুড়ি, সোনার কেল্লা। না না, সোনার গোরু। আই মিন, গোরুর সোনা আর কি। মিম থেকে শুরু করে কবিতা। কার্টুন থেকে শুরু করে টু লাইনার। পক্ষে গো ভক্তি থেকে শুরু করে বিপক্ষে আলো ও চোনা। ঢালাও আসছে। নেহাত এব্যাপারে কোনো টিকটক আমার চোখে পড়েনি, আর নিউজ চ্যানেলে প্যানেল ডিসকাশন বসেছে কিনা, তার খোঁজ নেওয়া হয়নি। বাকি সব দিক কভার করে খিল্লিবাজির চূড়ান্ত ইতিমধ্যেই সাঙ্গ।
এবার আপনি ভাবছেন, শুরুয়াদ তো করেছেন দিলুদা, আর ক্রেডিটের ক্ষীর খেয়ে যাবে সোশ্যাল মিডিয়া! আসলি পন্ডিত না পাবে দুধ ঘেঁটে সোনা, না পাবে মিমহিরোর অস্কার, এয়াইসে ক্যাইসে চলেগা দাদা!
আসলি ব্যাপার তা নয়। তলিয়ে দেখুন, ফেসবুকে এখন সমান্তরালভাবে দু’ধরনের আলোচনা ঝিলমিলিয়ে চলছে। একটি তো মিম ও খোরাকির হই হই রই রই ধারা, যার কথা আগেই বলেছি। আরেকটি হল সিরিয়াস ভাবনা। এই যে এভাবেই উরুম ধুরুম বকে জনগণের চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আপনি ভাট বকা নিয়ে ব্যস্ত ওদিকে কোনো না কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বেচে দিয়ে মুখ মুছে ফেলছে সরকার, সেটাই প্রাঞ্জল করে বোঝানোর পালাও তো সোশ্যাল বাজারে কম না। এবার আপনি কোন পথে হাঁটবেন সেটা আপনার বিচার। অথবা, দুটোই করতে পারেন। প্রথমে খানিক খি খি করে হাসলেন, তারপর দেশের ও দশের দুর্দশা ভেবে গম্ভীর হয়ে গেলেন। তাতে আপনার ক্যাবলামো যথেষ্ট তৃপ্তি পেল, আবার নাক আর ঠোঁটের মাঝখানে গোঁফের বদলে সিরিয়াসনেসও ঝোলানো গেল। কিন্তু ওই নাকের তল দিয়েই আদত সত্যিটা সুরুত করে বেরিয়ে গেল যে!
আপনি বুঝতেই পারলেন না, গোটা বং সংস্কৃতির ধারক বাহক হয়ে এখন একমাত্র বিরাজমান দিলুদাই। চ্যাটুজ্জেদের রোয়াকে বসে ডি লা গ্র্যান্ডি বলে চিল্লিয়ে যখন বার্মার সৈনিকদের মাঝে ক্যামোফ্লেজের গল্প শোনাতেন, প্যালা হাবুলদের সঙ্গে চোখ গোল্লা গোল্লা করে তো শুনেছেন আপনিও। বনমালী নস্কর লেনের ওই টংয়ের ঘরে বসে যখন প্রশান্ত মহাসাগরের ফুটকির মতো একটা দ্বীপে দাপটে অভিযান চালানোর কথা বলেছেন, শিশির গৌরদের সঙ্গে আপনিও তো বিনা প্রতিবাদেই মেনে নিয়েছেন। তাহলে টেনিদা, ঘনাদাদের উত্তরসূরি হিসাবে দিলুদার দুধেল তত্ত্ব মেনে নিতে আপত্তি কোথায়!
খালি একটু কম্প্রোমাইজ করতে হবে। বাস্তব নয়, দিলুদাকে কাল্পনিক চরিত্র বলে ভাবুন। দেখবেন, বিশ্বাসে মিলে যাবে। শ্রদ্ধায় চোখ বুজে আসবে, মাথা বুকের কাছে হেট। গুরু ভজে কেন এতদিন ভালোবাসিনি ভেবে দুফোটা চোখের জলও হয়তো।
রোয়াকে বসে গুলতাপ্পি তো আর আমাদের আজকের কালচার নয়! আপনি আমি পারলাম না। ধরে রাখলেন দিলুদাই। জয় শ্রী গুল।