বিশেষ প্রতিবেদন
গত ২০ মে সুপার সাইক্লোন আম্ফানের তাণ্ডেবর পর ঝড়খালির সর্দারপাড়ার বাসিন্দা লক্ষ্মণ স্বর্ণকার (৫২) বলেন, আমরা আয়লায় (২০০৯) বেঁচে গিয়েছি। যদিও তার তাণ্ডব কম কিছু ছিল না। তবে আম্ফান অন্যরকম। আমরা ভেবেছিলাম আম্ফান হয়তো আর পাঁচটা ঘুর্ণিঝড়ের মতোই একটা ঝড়ে, যার গতিবেগ স্বাভাবিকের থেকে কিছুটা বেশি হবে।
তবে লক্ষ্মণবাবুর সেই ভুল ভাঙতে বেশি সময় লাগেনি। গত বুধবার বিকাল ৪টে নাগাদ যখন এলাকায় থাবা বসাল আম্ফান, তখন তিনি অনুভব করেছিলেন, এটাই তার জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। জীবনে এই প্রথমবার কোনো সাইক্লোনে তিনি এতটা ভয় পেয়েছেন। তার কথায়, নদীর জলস্তর বাড়ছিল এবং সেই সঙ্গে পাড়ে আছড়ে পড়ছিল জোয়ারের ঢেউ। অন্তত শ খানেক মানুষ আতঙ্কে নদীবাঁধের কাছে ছুটে যাই। এগুলি অস্থায়ী বাঁধ। আমরা আরও বালির বস্তা ফেলে এগুলি মজবুত করার চেষ্টা চালাই। জলের দাপটে বাঁধ রীতিমতো কাঁপছিল। আমাদের কাছে যেকটা বালির বস্তা ছিল, সব দিয়ে আমরা বাঁধের সহনশীলতা বৃদ্ধির চেষ্টা করি। গ্রামের সমস্ত মানুষ দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে পড়েন। তারা সবাই পাকা রাস্তা ধরে সাইক্লোন সেন্টারের দৌকে ছুটতে থাকেন।
সাইক্লোন সেন্টারগুলি সাধারণত দু-তিন তলা বিল্ডিং। এগুলিতে তিন থেকে চারটি বিশাল বিশাল ডরমিটোরি এবং হল ঘরের মতো কাঠামো, কমন টয়লেট এবং সবার ব্যবহারের জন্য একটি বিশাল রান্না ঘর রয়েছে। গ্রামবাসীরা এখানে কয়েকদিনের জন্য আশ্রয় গ্রহণ করেন। বিপর্যয়ের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে তারা এখানে কদিন থাকবেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১৪টি বিপদঘেঁষা ব্লকের মধ্যে এরকম অন্তত ১৫০টি শেল্টার রয়েছে। কোভিড-১৯ আতঙ্কের মধ্যে সামাজিক দূরত্ববোধ নীতির কথা মাথায় থাকলেও এখানে যে গাদাগাদি করে থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই, গ্রামবাসীরা সেটা জানেন। ভয় পেলেও কিছু করার নেই। জীবন বাঁচাতে এটা তাদের করতেই হবে। এটা একটা অদ্ভুত পরিস্থিতি। যা কয়েকদিন আগে বাংলায় ঝড়ের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এসে স্বীকার করেছিলেন খোদ দেশের প্রদানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আকাশপথে পরিদর্শন করার পর তিনি বলেন, বাংলাকে দুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। একদিকে (কোভিড-১৯ এর জেরে) আমরা মানুষকে ঘরে থাকতে বলছি, অন্যদিকে আম্ফানের থেকে জীবন বাঁচাতে আমরা তাদের বাড়ির বাইরে থাকতে বলছি। এ এক অদ্ভুত পরিস্থিতি।
তথ্যসূত্র- দ্য প্রিন্ট