এমনিতেই দেখতে ছবির মতো সুন্দর। অনেক সময় আপনার কম্পিউটার বা মোবাইলে থাকা এইচডি ওয়ালপেপারের মতো! শুধু ছবি নয়, ইতালির একাধিক দ্বীপ বাস্তবেই ঠিক এতটা সুন্দর।
এই দ্বীপগুলির আবহাওয়া একদিকে যেমন উষ্ণ, তেমনি অন্যদিকে রয়েছে ভয়ঙ্কর-সুন্দর বিভিন্ন আগ্নেয়গিরি। সিসিলির এওলিয়ান দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম দুটি সুন্দর দ্বীপ হল স্ট্রম্বোলি এবং ফিলিকুড়ি। যারা কোলাহল থেকে একটু একা সময় কাটাতে চান, তারা সাধারণত এই দ্বীপগুলিতে পা রাখেন। ইতালির এই দ্বীপগুলি কেবলমাত্র এক একটা দ্বীপ নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক রোমাঞ্চ। একবার এই দ্বীপগুলিতে পা রাখলে আপনার অসাধারণ অভিজ্ঞতা হতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বিষয়টা আরও স্পষ্ট করে বলেন। তাদের মতে, এই দ্বীপগুলি যৌনতার আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এই দ্বীপগুলিতে যৌনতার চাহিদা মেটানোর নানা উপায় রয়েছে। এর পাশাপাশি পর্যটকরাও নিজেদের মতো সময় কাটাতে পারেন। তাতে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না। এছাড়া দ্বীপগুলির মনোরম আবহাওয়ার দরুণও দম্পতি বা প্রেমিক-প্রেমিকারা একান্তে সময় কাটাতে পছন্দ করেন।
দ্বীপগুলির উষ্ণ থার্মাল জল, অসাধারণ সুন্দর লাভার স্রোত, অবর্ণনীয় সুন্দর জলপ্রপাতকে “অর্গাজমিক” ককটেল বলে অনেকে তকমা দিয়েছেন। অর্থাৎ সেগুলি এতটাই আকর্ষণীয় যে আপনার চোখের পলক পড়বে না! একবার দেখলে আপনার বার বার দেখার ইচ্ছে হবে। জানা যায়, সদ্য বিবাহিত দম্পতি, যারা সন্তানের বাবা-মা হতে ইচ্ছুক, তারা এই দ্বীপগুলিতে ভিড় জমান।
লাভার বিচ্ছুরণ
স্ট্রম্বোলি হল পৃথিবীর অন্যতম সক্রিয় একটি আগ্নেয়গিরি। এই দ্বীপকে বিশ্বের অন্যতম কামোদ্দীপক দ্বীপ হিসেবে তকমা দেওয়া হয়। এই দ্বীপে পা রাখলে আপনার মনের ভেতরের একটু অন্যরকম ইচ্ছে মনের মধ্যে উুঁকি দিতেই পারে! প্রায় প্রতি ১৫ মিনিটে এই দ্বীপের আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত হয়। চারিদিক ধোঁয়ায় ভরে যায়। তবে সেই সাথে উত্তেজনার বশে বাড়তে থাকে হৃদস্পন্দনও। আগ্নেয়গিরিগুলির চারপাশে রয়েছে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য। দেখা যায় বিভিন্ন রঙের ফুলের সমাহার। চোখে পড়ে লাভার স্রোত বয়ে যাওয়ার নানা ক্ষতচিহ্ন।
ইতালির নির্জন সমুদ্র সৈকতগুলির মধ্যে অন্যতম হল পিসিটা (Piscità) বিচ। তারা ভরা রাতের আকাশে আগ্নেয়গিরির রূপ দেখার জন্য পর্যটকরা এই দ্বীপে পা রাখেন। রাতের বেলায় নৌকা করে পর্যটকদের পৌঁছতে হয় এই দ্বীপে। প্রত্যেকবার অগ্ন্যুৎপাতের সাথে সাথে আশেপাশের পরিবেশ উষ্ণ হয়ে ওঠে। মাটির নিচেও উষ্ণতা পৌঁছায়। গরম হয়ে ওঠে। আবার রাতের বেলা দেখা যায় ঠিক বিপরীত আবহাওয়া। তখন উষ্ণতা হ্রাস পায়। স্থানীয় ওয়াইন ব্যবসায়ী মারিয়া পুগলিসি বলেন, এটি একটি অত্যন্ত কামোদ্দীপক স্থান। এখানে প্রতি মুহূর্তে আপনি নিজের মধ্যে একটা উত্তেজনা অনুভব করবেন। মনে হতে পারে যে আপনার শরীরের ভিতরে থাকা ভলক্যানো ফেটে পড়বে।
‘দুষ্টু ছেলে’
আগ্নেয়গিরিই হল এই দ্বীপের মূল আকর্ষণ। ওই ব্যবসায়ী আরও বলেন, আট ঘন্টা ট্রেক করে আগ্নেয়গিরির ক্ষতস্থানের কাছে তৈরি হওয়া গর্ত দেখতে যান অনেক পর্যটক। তারা মাটিতে পেট ঠেকিয়ে শুয়ে মাটির কম্পন অনুভবও করেন। এর মাধ্যমে তাদের শরীরেও এক প্রকার কম্পন সৃষ্টি হয়। ওই ওয়াইন ব্যবসায়ীর কথায়, বিষয়টা অনেকটা অর্গ্যাজমিক অভিজ্ঞতার মতো, যার দ্বারা আপনার মধ্যে যৌন চাহিদার আগুন জ্বলে। উষ্ণতা এবং আগ্নেয়গিরির শব্দ আপনার রক্তে ঝড় তোলে। আপনার মধ্যে তখন যৌন চাহিদা জেগে ওঠে। আগ্নেয়গিরি সক্রিয়, আমরা একে বলি “ইদ্দু” (পুরুষ), এবং সে অনেকের মধ্যে চাহিদার আগুন জ্বালায়। সে এক নটি বয় বা দুষ্টু বালক।
স্ট্রম্বোলির রাতের পরিবেশও যৌন চাহিদা বৃদ্ধির পিছনে এক অন্যতম বড় কারণ বলে বিবেচনা করা হয়। ইতালির এই দ্বীপে রয়েছে এক বিশেষ গাছ, রাতে যেটি থেকে অবশ করে দেওয়ার মতো এক সুগন্ধ বের হয়। এর দ্বারাও আশেপাশে থাকা ব্যক্তিদের যৌনতার চাহিদা আরও বেড়ে যায়। এর মাধ্যমে দম্পতিদের মধ্যে সন্তানের পিতা-মাতা হওয়ার ইচ্ছে বৃদ্ধি পায়। দ্বীপের এক রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী লে টেরেজা ডি ইয়োলো বলেন, এই গাছকে বলা হয় সেস্ট্রাম নক্টারনাম। এই গাছের সবুজ-সাদা ফুল কেবলমাত্র সূর্য অস্ত যাওয়ার পর ফুটে ওঠে। ঠিক তখনই ম্যাজিক দেখা যায়! আমরা একে বলি রাতের সুন্দরী। এর সুগন্ধ এতটাই শক্তিশালী যে আপনার মাথা ভোর পর্যন্ত ঝিম ঝিম করতে পারে, অর্থাৎ আপনার ঘুম ঘুম মনে হতে, মাথা একটু ঘুরছে মনে হতে পারে। এক অদ্ভুত ঘোর সৃষ্টি করে। মনে হবে আপনি নেশা করেছেন। দ্বীপের অধিকাংশ বাসিন্দার বাড়ির সামনে রয়েছে এই গাছে। এই গাছের ফুলের সুগন্ধ সবার মধ্যে এক ভালো অনুভূতি সৃষ্টি করে।
মোহময়ী উদ্ভিদ
সোস্ট্রাম নক্ট্রানামের (Cestrum nocturnum) সুগন্ধের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি মানুষকে আরাম প্রদান করে। দুশ্চিন্তা কমায়। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, প্রাচীন কাল থেকেই মনে করা হয় যে যৌন চাহিদা সৃষ্টির সাথে এই উদ্ভদের এক গভীর সংযোগ আছে। এই গাছের ফুলের সুগন্ধে যৌন জীবন সমৃদ্ধ হয়। ভালোবাসার ইচ্ছে অনেকটাই বেড়ে যায়। যে সমস্ত সিঙ্গল যুবক-যুবতীরা এখানে ছুটি কাটাতে এসে আলাপ করেন, তাদের অধিকাংশের সম্পর্ক পরে বিবাহ বন্ধনে পরিণত হয়। সন্তান জন্ম হওয়ার খুশি পালন করতে তারা আবার এই দ্বীপেই ফিরে আসেন। অতীতে একাধিক নামিদামী লেখক, কবি এই ফুলের গন্ধে মুগ্ধ হয়ে অনেক লেখালেখি করেছেন। স্ট্রম্বোলির প্রায় প্রতিটি কোণায় এই গাছ দেখা যায়। এই গাছ জেসমিন প্রজাতির। যারা স্থানীয় নন, তারা এই গাছটি দেখে অনেক সময় বোকা বনে যেতে পারেন। কারণ দিনের বেলায় এটি দেখতে আর পাঁচটা সাধারণ গাছের মতো। আগাছার মতো দেখতে। দেখতে খুব একটা সুন্দর নয়। তবে রাতে এর রূপ, রস, গন্ধ সম্পূর্ণভাবে বদলে যায়।
সাধারণত নিরক্ষীয় আবহাওয়া যুক্ত অঞ্চলে এই উদ্ভিদ জন্মায়। কথিত আছে যে ইতালীয় ভূপর্যটক ক্রিস্টোফার কলোম্বাস এই গাছ এনেছিলেন। স্ট্রম্বোলির মতো অত্যন্ত উষ্ণ আবহাওয়া যুক্ত এলাকা এই উদ্ভিদের বেড়ে ওঠার জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। আবার অনেক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, এই উদ্ভিদ আদতে আগ্নেয়গিরির সন্তান। ভায়াগ্রার মতো এই গাছ কাজ করায় তারা খুশি।
আকর্ষণীয় গুহা
ইতালির আকর্ষণীয় দ্বীপগুলির মধ্যে আর একটি হল ফিলিকুড়ি। এই দ্বীপে দৃষ্টি আকর্ষণকারী অনেক প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে। এই দ্বীপের গুহার আড়ালে রোদের তাপ থেকে বাঁচতে অনেক পর্যটক আশ্রয় গ্রহণ করেন। এবং নির্জন স্থান হওয়ায় সেখানেই অনেক সময় তারা যৌন মিলনে লিপ্ত হন এবং সন্তান ধারণ করেন। তাই ফিলিকুড়ি দ্বীপের গুহাগুলিকে অনেকে ফার্টিলিটি কেভস বলেও আখ্যা দিয়েছেন। স্থানীয় মৎসজীবীরা তাদের নৌকায় করে অনেক দম্পতিকে এই গুহায় পৌঁছে দেন।