জরাজীর্ণ টালা ব্রিজ ভাঙার কাজ আগামী ৪ জানুয়ারি থেকে আরম্ভ হতে পারে। রাজ্যের পরিবহণ দপ্তর এবং কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের আধিকারিকরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। শনিবার একটি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, টালা ব্রিজ ভাঙা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সোমবার একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক বলেন, আগামী ৪ জানুয়ারি থেকে টালা ব্রিজ ভাঙার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে রেল মন্ত্রককেও জানানো হয়েছে। ব্রিজ ভাঙার ব্যাপারে অবশিষ্ট কাজ এবং রেলের ট্রাফিক ব্লক নিয়ে এবার রেলকে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। রেলকে আমরা সবরকম সাহায্য করতে প্রস্তুত।


প্রসঙ্গত, টালা ব্রিজের নিচে রেললাইন রয়েছে। তাই এই ব্রিজ ভাঙলে, ট্রেন চলাচলের উপর প্রভাব পড়বে। ব্রিজ ভাঙার সময় ওই ট্র্যাক দিয়ে ট্রেন চলাচল করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে রেলকে ওই রুটের বদলে বিকল্প রুটের কথা ভাবতে হবে। কনসাল্ট্যান্ট ফার্ম রাইটস এবং ব্রিজ বিশেষজ্ঞ ভিকে রায়না পর্যবেক্ষণে পর রাজ্য সরকারকে জানিয়েছিলেন, টালা ব্রিজ যাতায়াতের জন্য বিপজ্জনক। ইতিমধ্যে ব্রিজে ট্রাক, বাসের মতো ভারী যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, ৫৭ বছরের পুরানো এই ব্রিজ ভেঙে নতুন করে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। প্রসঙ্গত, টালা ব্রিজের পাশেই রয়েছে টালা পাম্পিং স্টেশন। জলের পাইপ ছাড়াও অনেক কেবল রয়েছে টালা ব্রিজের পিলারের আশেপাশে। তাই ব্রিজ ভেঙে ফেলার সময়, এগুলি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তার জন্য প্রশাসনের তরফ থেকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
পূর্ব রেলের এক আধিকারিক বলেন, একটি ড্রাফট পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়েছে। সোমবারের বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এদিকে লকগেট ব্রিজ দিয়ে বাস চলাচলের অনুমতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। উত্তরের দিকে বা চিড়িয়ামোড়ের দিকে যাওয়া বাসগুলি এবার এই সেতু ব্যবহার করতে পারবে। অন্যদিকে শ্যামবাজারের দিকে যাওয়া বাসগুলি বেলগাছিয়া এবং আরজি কর রোড ব্যবহার করবে।
কলকাতা পুরনিগমের বরো-১ এর চেয়ারম্যান তরুণ সাহা বলেন, এই পদক্ষেপের ফলে যানজট কমবে। পরিবহণ দপ্তরের তরফ থেকে বাস অপারেটরদের সঙ্গে পরিবর্তিত রুট নিয়ে আলোচনা হবে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কিছুদিন সময় লাগবে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে এই নতুন রুটে বাস চলাচল শুরু হতে পারে।
টালা ব্রিজ ভেঙে দেওয়ার পর সিঁথির মোড়-বাগবাজার বাটা রুটের অটো পরিষেবা বন্ধ রাখা হবে। ব্রিজ ভাঙার সময় রেলকেও টালা ব্রিজের নিচ দিয়ে যাওয়া ট্র্যাকের বদলে অন্য রুট দিয়ে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী ট্রেন চালানোর ব্যবস্থা করতে হবে। মাঝেরহাট ব্রিজ ভাঙার কাজ সম্পন্ন করতে চারটি উইকএন্ডের জন্য ৩৬ ঘন্টার ট্রাফিক এবং পাওয়ার ব্লক করতে রেলের কাছে অনুমতি চেয়েছিল রাজ্য। রাজ্য সরকারের অনুমান ছিল, ব্রিজটি ভাঙার কাজ সম্পূর্ণ করতে অন্তত পাঁচদিন সময় লাগবে।
টালা ব্রিজ ভাঙার সময় রাতে কয়েকঘন্টার জন্যও ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখতে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। রাতের দিকে চক্ররেল পরিষেবা না থাকলেও ওই সময় স্টেবলিংয়ের কাজ করা হয়। দমদম, পাতিপুকুর, টালা এবং বাগবাজার হয়ে যাওয়া চক্ররেলের লাইন ছাড়াও অনেক যাত্রীবাহী এক্সপ্রেস ট্রেনও টালা ব্রিজের নিচে থাকা ট্র্যাক ব্যবহার করে।