বিমল মান্না
কথা হচ্ছিল তপন দাসের সঙ্গে। মধ্য তিরিশের যুবক। কাকদ্বীপ মহকুমার পাথরপ্রতিমা ব্লকের দক্ষিণ লক্ষ্মী নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা। পৈত্রিক সম্পত্তি বিঘা খানেক বাস্তু জমি। বাবা পেশায় ভাগচাষী। তপন বিবাহিত। এক কন্যা সন্তানের পিতা। মাধ্যমিকের টেস্টে ফেল করার পর তপন পড়াশুনায় ইতি টানে। তারপর থেকে বাবার সঙ্গে ভাগ চাষির কাজ করত। কিছু বেশি অর্থ রোজগারের আশায় বর্ধমানের বিভিন্ন হিমঘরে কিছুদিন শ্রমিকের কাজও করেছে। তবে সেখানেও বেশি টাকা পাওয়া যেত না। তাই শেষ পর্যন্ত তপন কেরলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ তিনি শুনেছেন, কেরলে ৯০০ টাকা পর্যন্ত দৈনিক মজুরি পাওয়া যায়।
যেমন ভাবা তেমনি কাজ। ব্যাগপত্র গুছিয়ে হাওড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। প্রায় তিন দিনের ট্রেন সফরের পর কেরলের মাটিতে পা রাখবেন। বাড়ি থেকে আসার সময় দু বছরের মেয়েটা বাবা-বাবা বলে তার পা জড়িয়ে ধরেছিল। সে ভেবেছে, বাবা হয়তো কোথাও ঘুরতে যাচ্ছে। তাই আব্দার জুড়েছে, বাবার সঙ্গে যাবে। আসার সময় বৌয়ের চোখটাও ছল ছল করছিল। তপনের গলা কেমন যেন বন্ধ হয়ে আসছে। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে সে রওনা হয় কেরলের উদ্দেশ্যে। বাড়িতে ফেরে বছরে দু-তিন বার।
শুধু তপন নয়, এই কাহিনী প্রায় গোটা সুন্দরবনের গ্রামে গ্রামে। অনেকের যথেষ্ট জমি আছে। ভালোভাবে চাষ করলে সেখান থেকে টাকা রোজগার হওয়ার কথা। কিন্তু আয়লার পর জমিতে নোনা জল ঢুকে যাওয়ার পর থেকেই মাটির উর্বরতা হ্রাস পেয়েছে। আগের মতো ফলন এখন হয় না বললেই চলে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে সার, কীটনাশক সহ অন্যান্য কৃষি উপাদানের মূল্যবৃদ্ধি। তাই কৃষি এখন আর লাভজনক নয়। এক প্রকার বাধ্য হয়েই সুন্দরবনের বিভিন্ন গ্রামের পুরুষরা শ্রমিকের কাজ করতে কেরলে যাচ্ছেন।
বছর সাতাশের পূর্ণেন্দু বলেন, বাড়িতে বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তান ছেড়ে এত দূরে আসতে কার ভালো লাগে বলুন! কিন্তু কিছু করার নেই। গ্রামে থাকলে খাব কি। পেট ভরবে কিভাবে। তাই ভালো না লাগলেও একপ্রকার বাধ্য হয়ে কেরলে আসতে হয়। বাড়ির কথা খুব মনে পড়ে। বছরে মাত্র দু-একবার বাড়ি যাই। এত দূর থেকে ঘন ঘন বাড়ি যাওয়াও সম্ভব ন।