বিশ্বজিৎ মান্না
ঘোড়ামারা দ্বীপ, সাগরদ্বীপ, মৌসুনি আইল্যান্ডের নাম হয়তো পড়েছেন কোনো ট্রাভেল ম্যাগাজিনের পাতায়। কিন্তু যেটা হয়তো ওরা লেখে না, কোনো সংবাদপত্র গুরুত্ব দিয়ে ছাপে না, তা হল সুন্দরবনের এই দ্বীপগুলি এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা ক্রশম সমুদ্রে তলিয়ে যাচ্ছে। ভিটেমাটি, চাষের জমি হারিয়ে উদবাস্তুতে পরিণত হচ্ছে বহু পরিবার। শুধু সুন্দরবন নয়, উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের দরুন সমগ্র বিশ্বে উপকূলবর্তী এলাকার অনেক অংশে উঠে আসবে সমুদ্রের জল। ইতিমধ্যে অনেক দ্বীপ এভাবে নিশ্চিহ্ন হয়েছে। যেমন সুন্দরবনের লোহাচড়া দ্বীপ। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হতে চলেছে বাংলাদেশের। সুন্দরবনের অর্ধেকের বেশি বাংলাদেশের অন্তর্গত। তাছাড়া বাংলাদেশের দক্ষিণাংশের বিস্তীর্ণ এলাকার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে খুব উঁচু নয়। ফলে, উষ্ণায়নের প্রভাবে অ্যান্টার্কটিকার বরফের চাদর যে হারে দ্রুত গতিতে গলছে, যেভাবে একের পর এক বৃহৎ হিমশৈল সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, তা চলতে থাকলে আগামী এক দশকেই ভারত-বাংলাদেশে সুন্দরবনের বহু বদ্বীপ সহ লো লায়িং এরিয়াকে সমুদ্র গিলে খাবে। ঘর ছাড়া হবেন হাজার হাজার মানুষ। ইতিমধ্যে তা শুরু হয়েও গেছে। মৌসুনি দ্বীপ কিংবা ঘোড়ামারা দ্বীপে প্রায় প্রতি বছর বর্ষায় বিপুল কৃষি জমি সমুদ্রে চলে যায়। নদী বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢোকা যেন রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে অনেকে ঘরবাড়ি হারিয়ে পথে বসেছেন। অনেকে এলাকা ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন। যাদের সামর্থ নেই তারা মাটি কামড়ে পড়ে আছেন। কিন্তু কতদিন থাকবেন? বিশ্বের অনেক দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যারা উদবাস্তু হয়েছেন তাদের পুনর্বাসনের জন্য নির্দিষ্ট প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, ভারতে সুন্দরবনের এই মানুষগুলোকে এখনও ক্লাইমেট রিফিউজি বলে স্বীকৃত দেওয়া হয় নি। পুনর্বাসন তো দূরের কথা। ভোট আসে, ভোট যায়। কোনো এমএলএ বা এমপির পা বোধহয় ওই দ্বীপগুলোতে পড়ে না। তবুও মানুষগুলো না মরে বেঁচে রয়েছেন। হাল ছাড়ছেন না। তাদের কথা নিশ্চই কেউ একদিন শুনবে!