করোনাভাইরাসের আতঙ্কে ভুগছে গোটা চিন। আশেপাশের দেশগুলিতেও এই ভাইরাস ঘিরে উদবেগ ছড়িয়েছে। এর প্রভাব পড়ল সুন্দরবনের কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের উপর।
সুন্দরবনের মৎস্যজীবীদের কাছে কাঁকড়া বিক্রয় রোজগারের একটি অন্যতম সেরা উপায়। কারণ বিদেশের বাজারে মোটা টাকায় সুন্দরবনের কাঁকড়া বিক্রি হয়। এর মধ্যে সবার আগে রয়েছে চিন। সেদেশের বেজিং, হংকংয়ের মতো শহরে সুন্দরবনের কাঁকড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়া তাইল্যান্ড, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সুন্দরবনের কাঁকড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে গত ২৬ জানুয়ারি থেকে এই দেশগুলিতে সুন্দরবনের কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ। সৌজন্যে করোনাভাইরাস। অনেকে মনে করেছেন, সামুদ্রিক খাবার থেকে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। সেই আশঙ্কায় তারা কাঁকড়া খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। শুধু কাঁকড়া নয়, চিংড়ি, অক্টোপাস রপ্তানিও চিনে বন্ধ। পশ্চিবঙ্গের সুন্দরবনের মতো, বাংলাদেশের সুন্দরবনের মৎসজীবীরাও চিন সহ অন্যান্য দেশে কাঁকড়া, চিংড়ি ইত্যাদি রপ্তানি করতে পারছেন না। তাদের মাথায় চিন্তার হাত।
প্রসঙ্গত, কাঁকড়া ধরে সুন্দরবনের বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু হঠাৎ কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা কুল-কিনারা ভেবে পাচ্ছেন না। এদিকে গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো করোনাভাইরাসের আতঙ্কের জেরে দেশীয় বাজারেও কাঁকড়ার চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। ফলে কাঁকড়ার দাম ব্যাপক কমে গিয়েছে। যে কাঁকড়া আগে ১৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হত তা এখন ৩০০ টাকায় নেমে এসেছে। তবুও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।
সুন্দরবনের মৎস্যজীবীদের একাংশ কাঁকড়া ধরে মোটা দামে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীদের কাছে। ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা, ঝড়খালি-সহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ীরা আড়ত খুলে মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে কাঁকড়া সংগ্রহ করেন। সেই কাঁকড়া মাপ অনুযায়ী বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে রফতানিকারী সংস্থাগুলোর কাছে বিক্রি করেন কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা। সেখান থেকেই এই কাঁকড়া রফতানি হয় বিদেশে। ওই ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সুন্দরবনের এই কাঁকড়া সব থেকে বেশি কেনে চিন। চিনের বেজিং, সাংহাইয়ের মত শহরে এই কাঁকড়া রফতানি হয়। এর পাশাপাশি তাইল্যান্ড, ব্যাঙ্কক, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর-সহ আশপাশের অন্য দেশেও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে এই কাঁকড়ার। ক্যানিংয়ের কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা বলেন, করোনাভাইরাসের আতঙ্কে এখন কাঁকড়া রফতানি প্রায় বন্ধ। অল্প স্বল্প রফতানি হচ্ছে। তবে দাম একদম পড়ে গিয়েছে। শুধুমাত্র স্ত্রী কাঁকড়া সামান্য বিক্রি হচ্ছে।
চিনে কাঁকড়া রফতানিকারী কয়েকটি সংস্থার দাবি, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সামুদ্রিক প্রাণী থেকেই হয়েছে বলেই অনেকে মনে করছেন। তাই চিন-সহ আশপাশের দেশগুলিতে কাঁকড়া রপ্তানি আপাতত বন্ধ রয়েছে। এর ফলে কাঁকড়ার কারবারের সঙ্গে যুক্ত তিরিশ হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
ছবি সৌজন্যে ঢাকা ট্রিবিউন।