বিশ্বজিৎ মান্না
আম্ফানের কথা একটা গোটা প্রজন্মের কাছে আতঙ্ক হয়ে থাকবে। সুন্দরবনের বাসিন্দারা অনেক ঝড়, বৃষ্টি কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখলেও আম্ফানের মতো তাণ্ডব তারা জীবনে প্রথমবার দেখলেন। কত পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, সেসব নিয়ে এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে আম্ফানে যে মারাত্মক ক্ষতিটা হয়েছে তা হল, কৃষি জমিতে নোনা জলের প্রবেশ। সুন্দরবনের অর্থনীতির অন্যতম ভিত হল কৃষিকাজ। কিন্তু নোনা জল জমিতে ঢুকে যাওয়ায় আন্তত আগামী কয়েক বছর এই জমিতে ফসল ফলানো যে প্রায় অসম্ভব কাজ, তা অকপটে স্বীকার করেছেন কৃষকরা।
চেনা যাচ্ছে না এই সুন্দরবনকে
গোসাবা ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসের একজন কর্মী পরিতোষ মণ্ডল বলেন, “আমাদের সুন্দরবনকে এখন চেনা যাচ্ছে না। হাজার হাজার দরিদ্র মানুষ সব হারিয়ে আরও অসহায় হয়ে পড়েছেন। এটা তাদের কাছে মৃত্যু যন্ত্রণার মতো বেদনমায়।” গোসাবা ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় শয়ে শয়ে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। ছিঁড়ে গিয়েছে ওভারহেডের তার। এর দরুন আক্ষরিক অর্থেই রাজ্যের অন্যান্য অংশের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সুন্দরবনের এই অঞ্চল। তবে কৃষকের জমিতে নোনা জল ঢুকে সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতিটা হয়েছে। এর দরুণ আগামীতে সুন্দরবনের কৃষি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জমির উর্বরতা কমে যাওয়ার দরুণ ফলন কমে যাবে। সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ তথা জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রপিকাল সয়েল অ্যান্ড বায়োলজি অ্যান্ড ফার্টিলিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কোঅর্ডিনেটর কমলকান্তি সেন বলেন, “আয়লার পর সুন্দরবনে জীবন থমকে গিয়েছিল। আমার আশঙ্কা, এবারেও একই অবস্থা, এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার থেকেও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। একটা বিশাল সঙ্কট তৈরি হতে চলেছে। আগামী দু বছর ধরে বিঘার পর বিঘা জমিতে কোনো চাষ করা যাবে না। জয়নগরের তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল দ্য অয়্যারকে বলেন, আসন্ন বছরে কৃষি নিয়ে আমি ভীষণ চিন্তিত। আমার নির্বাচনী কেন্দ্রের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কৃষি জমি নোনা জলের তলায় চলে গিয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আমি কথা বলার কথা ভাবছি, যারা এই ব্যাপারে আমাকে পরামর্শ দিতে পারবেন। এছাড়া এই ক্ষেত্রে কাজ করতে ইচ্ছুক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক এনজিওর সঙ্গেও আমি হাত মেলানোর জন্য প্রস্তুত। আমাদের গরিব কৃষকদের জন্য আমাদের একজোট হতে হবে।
তথ্যসূত্র এবং ছবি দ্য অয়্যার