বিশ্বজিৎ মান্না
সুপার সাইক্লোন আম্ফানের থাবা থেকে রেহাই পায়নি সুন্দরবনের কোনো এলাকা। সর্বত্রই কম বেশি এর প্রভাব দেখা গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির মধ্যে অন্যতম হল গোসাবা। ব্লকের রাঙ্গাবেলিয়া এলাকার বাসিন্দা সুকুমার মণ্ডলের স্ত্রী রেখা মণ্ডল সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সামনে নিজের বাড়ির অবস্থার কথা বলতে গিয়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না। তার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। কারণ নিজেদের সাধের বাড়ির প্রায় সম্পূর্ণ অংশই তো জলের তলায় চলে গিয়েছে। জল কিছুটা নামার পর বাড়ির ছাদটুকু দেখা যাচ্ছে। এই বাড়ি ফের কবে তারা বাসযোগ্য করে তুলতে পারবেন, আপাতত তা নিয়েই চিন্তা করছেন। সুকুমারবাবুর দুই বিঘা জমি আছে, যাতে তিনি ধান চাষ করেন। এছাড়া তাার তিনটি মাঝারি মাপের পুকুর রয়েছে। তবে সেগুলি এখন দেখলে নদীর অংশ বলেই মনে হবে।
গ্রামের কৃষিজমিতে প্রবেশ করেছে নদীর নোনা জল। এর ফলে গ্রামবাসীদের উদবেগ আরও বেড়ে গিয়েছে। সুকুমারবাবু বলেন, “আগামী ২-৩ বছর এই জমিতে আমরা চাষ করতে পারব না। এখানে কিছুই ফলবে না।” সাইক্লোন এবং বন্যা এই গ্রামের বাসিন্দাদের জীবনের একটা অঙ্গ হয়ে উঠেছে। তাই আম্ফানের তাণ্ডবে তারা খুব একটা অবাক নন। নিরুত্তাপভাবে সুকুমারের মন্তব্য, “আমরা এখন স্বীকার করে নিয়েছি যে এটাই আমাদের কপালে লেখা রয়েছে। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত আমাদের এভাবেই বাঁচতে হবে।”
ক্ষয়ক্ষতি আরও ভয়াবহ হত
গোসাবা ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসের এক সিনিয়র অফিসার বলেন, সাইক্লোন আম্ফানের দিক পরিবর্তন এবং উপযুক্ত প্রস্তুতির জেরে গোসাবায় ক্ষতি কিছুটা কম হয়েছে। নাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হত।
ওই আধিকারিক আরও যোগ করেন, “আমাদের ব্লকে কোনো মৃত্যুর খবর নেই। আমাদের কিছু বড় বড় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই কারণে অনেক এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। তবে সাইক্লোনের তাণ্ডবের কথা মাথায় রেখে বলতে হবে, আরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারত।”
১৯৯৯ সালের পর বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া প্রথম সুপার সাইক্লোন হল সাইক্লোন আম্ফান। গত ১০০ বছরে বাংলা এরকম শক্তিশালী ঝড়ের মুখোমুখি হয়নি। রাঙ্গাবেলিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে এখনও পুরোপুরি জল সরেনি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, যেদিন সাইক্লোন আছড়ে পড়েছিল, তার পরের দিন তাদের কৃষি জমিতে ১০-১২ ফুট উুঁচু জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। রাঙ্গাবেলিয়ার উত্তর পাড়ার দুই দিকে রয়েছে দুটি নদী- ডানদিকে রয়েছে বিদ্যাধরী এবং বাঁদিকে রয়েছে গোরমোর। এর ফলে রাঙ্গাবেলিয়াতে ধ্বংসের পরিমাণ আরও বেড়ে গিয়েছে। গঙ্গামমন্দির থেকে জ্যোতিরামপুর ঘাট পর্যন্ত একটি বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায় চলে যায়, যা দেখে একটি হ্রদ বলে মনে হচ্ছিল।
তথ্যসূত্র এবং ছবি দ্য অয়্যার