নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে এখনও উত্তপ্ত উত্তরপ্রদেশ। রাজ্যের মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ১৫। শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, পশ্চিমবঙ্গ, অসম, মেঘালায় সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই সংশোধীত আইনের বিরোধীতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ পরে পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধেও পরিণত হয়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সোমবার পর্যন্ত লখনউয়ে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। সিএএর বিরোধীতা সংক্রান্ত ঘটনায় উত্তরপ্রদেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৫। মোট ৭০৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিএএ বিরোধী বিক্ষোভ চলাকালীন কানপুরে একটি পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। টাইমস অব ইন্ডিয়াতে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, কানপুরে পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ বাধে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। অন্যদিকে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, সিএএ বিরোধীতায় নেমে উত্তরপ্রদেশে নিহত ৯ জন এবং ম্যাঙ্গালোরে নিহত ২ জনের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে দেবে দিল্লি ওয়াকফ বোর্ড।
সিএএ বিক্ষোভ দমনে একনায়কের মতো আচরণ করছে বিজেপি সরকার। শনিবার এই অভিযোগ তুললেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধি। শনিবারও দিল্লিতে জামিয়া মিলিয়া ইউনিভার্সিটির বাইরে বিক্ষোভ দেখা যায়।
সিএএ ঘিরে দক্ষিণ ভারত থেকেও বিক্ষোভের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদিন কোঝিকোড়ে বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশ এবং কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে ঝামেলা বাধে। বিক্ষোভকারীরা হেড পোস্ট অফিস কমপ্লেক্সে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ।
সমগ্র দেশেই সিএএর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এবার আসরে নামছে বিজেপি। বিরোধীরা এই সংশোধীত আইনের বিরুদ্ধে যেভাবে প্রচার করছে, তার পাল্টা হিসেবে সিএএর বিশদ ব্যাখ্যা করতে সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছোনোর উদ্যোগ গ্রহণ করল বিজেপি। দেশের তিন কোটি পরিবারের কাছে দলের তরফ থেকে সিএএর বিশদ ব্যাখ্যা করে বোঝানো হবে বলে স্থির করা হয়েছে। এই বার্তা পৌঁছে দিতে দেশজুড়ে ২৫০টি স্থানে সাংবাদিক সম্মেলন এবং ১০০০-এর অধিক সমাবেশের আয়োজন করতে চলেছে বিজেপি।
সিএএ এবং এনআরসির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন দেশের বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। ট্যুইটারে তিনি বলেন, দুটো বিষয় খুবই স্পষ্ট। দেশের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে এনআরসি, সিএএ প্রত্যাহার করতে হবে। সিএএ-কে অনৈতিক এবং সংবিধানের ভাবধারার বিরোধী তকমা দিয়ে তিনি বলেন, যেকোনো সুচিন্তিত এবং ন্যায় বিচারে বিশ্বাসী সরকার এটি প্রত্যাহার করবে।


রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট এনআরসি, সিএএ প্রসঙ্গে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তার অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা দেশে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছেন। তবে এটা আমরা হতে দেব না। গেহলট বলেন, অসমেই যখন সরকার এনআরসি বাস্তবায়িত করতে পারল না, তাহলে গোটা দেশে এটা কিভাবে বাস্তবায়িত করবে।