বিশ্বজিৎ মান্না
করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর জেরে সমগ্র দেশে লকডাউন জারি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সেই লকডাউন জারি থাকার কথা ছিল। তবে সেই নির্ধারিত সময়সীমায় দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মোটেও উন্নতি হয়নি। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। সেই সঙ্গে বেড়েছে মৃত্যু। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবার বর্ধিত করা হয়েছে লকডাউন। প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ৩ মে পর্যন্ত গোটা দেশে চলবে লকডাউন।


সুন্দরবনের অনেক মানুষ ভিন রাজ্যে কাজ করতে যান। হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষিত হওয়ার ফলে সবার পক্ষে বাড়িতে ফিরে আসা সম্ভব হয়নি। এরকমই এক যুবক হলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ মহকুমার পাথরপ্রতিমার বাসিন্দা স্বপন কুমার ভূঁইয়া। কেরলের ত্রিশুর জেলার চালকুড়িতে তিনি একটি শোরুমে কাজ করেন। লকডাউনের পর থেকেই সেখানে তিনি আটকে পড়েছেন। তার সঙ্গে পাথরপ্রতিমা এবং সুন্দরবনের আরও কয়েকজন যুবক রয়েছেন। প্রথম তাদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সব রকম সাহায্য করা হচ্ছিল। আপৎকালীন ভিত্তিতে তাদের থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের রসদ ফুরিয়ে এসেছে। লকডাউন জারি হওয়ার পর থেকেই কেরলে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বপনবাবু। তিনি বলেন, মাছ, শাকসবজি বাজার থেকে প্রায় উধাও হয়ে গিয়েছে।
এদিকে লকডাউন চলায় তাদের কাজ বন্ধ। হাতে নতুন করে টাকা আসছে না। যেটুকু টাকা ছিল, তা এই টানা ২১ দিনে খরচ হয়ে গিয়েছে। হাতে পড়ে রয়েছে সামান্য টাকা। ৩ মে পর্যন্ত তা দিয়ে কিভাবে চলবে, আপাতত সেটা নিয়েই চিন্তায় পড়েছেন স্বপনবাবুর মতো অনেকে।


স্থানীয় প্রশাসন, সরকারের তরফ থেকে ভিনরাজ্যের আটকে পড়া বাসিন্দাদের সাহায্যের নানারকম আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হল, তার কোনোটাই স্বপনবাবুদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। এদিকে আবার গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো, তার নিয়োগকর্তা তার সঙ্গে যোগাযোগ এড়িয়ে চলছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তাদের রান্না করার গ্যাস ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে এনে রান্নার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে স্বপনবাবুদের। তাদের স্টকে এখন খাবার বলতে শুধুমাত্র কিছু চাল, আলু আর ডাল। আর কিচ্ছু নেই। হাতে রয়েছে মাত্র শ পাঁচেক টাকা। দোকানেও ধারবাকিতে কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। ভিন রাজ্যে গিয়ে এভাবেই চরম বিপাকে পড়েছেন স্বপনবাবু। এদিন কেরল থেকে ফোনে কথা বলার সময় তিনি জানালেন, আজ দুপুর কলা গাছের থোড় ভাজা খেয়েছি। আর কিছু খাইনি। জানিনা কাল কি খাবো।
অর্থাৎ এক প্রকার অর্ধাহারে তাদের দিন কাটছে। এই উদবেগজনক পরিস্থিতিতে তারা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলে ঠিক করেছেন। স্বপনবাবু বলেন, আর একটা দিন অপেক্ষা করব। আমার মালিক যদি কোনোরকম সাহায্য না করেন, তাহলে বাধ্য হয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ করে সাহায্য চাইতে হবে। বেঁচে থাকার জন্য অন্তত কিছু খাবার তো প্রয়োজন।