বিশ্বজিৎ মান্না
সুপার সাইক্লোন আম্ফান সুন্দরবনে আছড়ে পড়ার পর কেটে গিয়েছে পাক্কা এক সপ্তাহ। গত সপ্তাহের বুধবারের সেই তাণ্ডবের কথা এখনও ভুলতে পারছেন না সুন্দরবনের মানুষ। একটা গোটা প্রজন্ম এই প্রথম এত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় প্রত্যক্ষ করল। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাই কতটা হতে পারে, সেটা স্রেফ অনুমনা করলেই শিউরে উঠতে হয়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার যে কয়েকটা স্থান আম্ফানে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল কাকদ্বীপ মহকুমার পাথরপ্রতিমা ব্লকের দক্ষিণ লক্ষ্মী নারায়ণপুর গ্রাম। সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হল, বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে এই এলাকার বাসিন্দাদের যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আম্ফানের তাণ্ডবের জেরে এলাকার শয়ে শয়ে বিদ্যুতের খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়া তো দূরের কথা, ক্ষতিগ্রস্ত খুঁটিগুলি এখনও পুনঃস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। মোবাইল ফোনে চার্জ দিতে না পারার ফলে প্রায় প্রত্যেকের মোবাইল ফোন বন্ধ। তার উপর আরও সমস্যা হল, দু-একটি সার্ভিস প্রোভাইডার বাদ দিলে বাকি কোনো সংস্থার মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করছে না। ফলে বাইরের থেকে কেউ যেমন ফোন করে এলাকার সমস্যার কথা জানতে পারছেন না, তেমনি এলাকার বাসিন্দারাও তাদের সমস্যার কথা বাইরের কাউকে জানাতে পারছেন না।
পাথরপ্রতিমায় কাজ করছে না অধিকাংশ মোবাইল নেটওয়ার্ক
কলকাতায় যেখানে তিন-চারদিন বিদ্যুৎ না থাকার ফলে জনগণ বিক্ষোভ দেখায়, পথ অবরোধ করে, সেখানে দাঁড়িয়ে এই বিস্তীর্ণ এলাকার সাত দিনেরও বেশি সময় ধরে অন্ধকারে ডুবে থাকার কথা ভাবলে অবাক হতে হয়। গ্রামে বিদ্যুৎ পরিষেবা কবে স্বাভাবিক হবে, তা কেউ বলতে পারছেন না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের থেকেও এর কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। একেই করোনার মোকাবিলায় লকডাউন চলছে। তার উপর আম্ফান সমগ্র পরিস্থিতিতে আরও জটিল করে তুলেছে।
কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকেন পাথরপ্রতিমার বাসিন্দা ভোলানাথ মান্না। তিনি বলেন, এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এলাকার অর্ধেকের বেশি গাছ ভেঙে পড়েছে। প্রায় প্রত্যেকের বাড়ির ছাউনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা উড়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় গ্রামে যাদের বাড়ি হয়েছিল, তাদের প্রত্যেকেরই অ্যাসবেস্টসের ছাউনি ছিল। আম্ফানের তাণ্ডবে তাদের কারুর বাড়ির ছাউনি আর অক্ষত নেই। তাই অনেককে খোলা আকাশের নীচে দিন কাটাতে হচ্ছে। এক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এলাকার শয়ে শয়ে বিদ্যুতের খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি পাথরপ্রতিমা বাজার এলাকাতেও বিদ্যুৎ নেই।