সুন্দরবনে বর্ষা আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে। এমনটাই জানালেন গবেষয়করা। দ্য হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, পরিযায়ী বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ে চলতি সম্মেলনে দ্য সুন্দরবনস অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ শীর্ষক একটি ফ্যাক্ট শিট পেশ করা হয়েছে। এই নথিতে বলা হয়েছে, জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের অনুমান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যত বাড়বে, আগামীদিনে সুন্দরবনে বর্ষা আরও শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে। খরার প্রকোপও বাড়বে। এর ফলে কৃষিকাজ এবং সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্র সংকটের মুখে পড়বে। গুজরাটে অনুষ্ঠিত কনফারেন্স অব পার্টিজ (সিওপি) অনুষ্ঠানে প্রকাশিত নথিতে এই দাবি করা হয়েছে।
প্রাকৃতিক বাসস্থান
নথিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র এবং মানুষের সুরক্ষায় উপকূলবর্তী এলাকার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সুন্দরবনে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার (প্যান্থেরা টাইগ্রিস টাইগ্রিস) – এর বাসস্থান সংকটের পড়বে। তাদের খাদ্যের উৎস হ্রাস পাবে।
ফ্যাক্ট শিটে উল্লেখ করা হয়েছে, উষ্ণায়নের কারণে বর্তমানে বছরে ৩.২ মিলিমিটার করে সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে। নথিতে বলা হয়েছে, ২০০০ সাল থেকে শুরু করে এক দশকে সমুদ্রের জলস্তর প্রায় ২৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। যার নিট ফল, বাংলাদেশের সুন্দরবনে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ৯৬ শতাংশ বাসস্থান সংকটের মুখে পড়েছে।
ইন্ডিয়ান রিভার টেরাপিন (বাটাগুর বাসকা), ইলিশ (তেনুয়ালোসা ইলিশা) এবং গাঙ্গেয় ডলফিন (প্ল্যাটানিস্তা গ্যাঞ্জেটিকা) সহ সংকটের মুখে পড়ে যাওয়া সুন্দরবনের জীবগুলির ট্রান্সবাউন্ডারি সংরক্ষণ নিয়েও অনুষ্ঠানে আলোচনা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানের বক্তারা হলেন ওয়াইল্ডলাইফ ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া, ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড ফর নেচার, ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া, টার্টল সার্ভাইভাল অ্যালায়েন্স (টিএসএ)-এর বিজ্ঞানীগণ এবং সেন্ট্রাল জু অথরিটির সদস্য সেক্রেটারি।
বন্যার আশঙ্কা
টিএসএ ডিরেক্টর শৈলেন্দ্র সিং বলেন, ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় অংশের সুন্দরবনে সমস্ত প্রজাতির প্রাণীর বাসস্থানের ক্ষেত্রে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। আমরা আশা করছি যে উত্থাপিত সমস্ত বিষয় সিএমএস কর্তৃক ভালোভাবে গ্রহণ করা হবে এবং সমগ্র সুন্দরবনে মিষ্টি জলের যেসমস্ত পরিযায়ী প্রাণী ঘোরাফেরা করে, তাদের সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ফ্যাক্ট শিটে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, সুন্দরবনে বন্যার প্রকোপও বেশ শক্তিশালী। নথিতে বলা হয়েছে, এই কারণে সমুদ্রের ক্রমবর্ধমান জলস্তর এই এলাকার উপর প্রভাব সৃষ্টি করবে। জলে ডুবে যাওয়ার ক্ষেত্রে ম্যানগ্রোভ কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হলেও ঘন ঘন বন্যা হলে বা বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে তাদের মৃত্যু হতে পারে।
ঘন ঘন ঝড় এবং সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি ছাড়াও জল ও মাটিতে লবণাক্ত বৃদ্ধি পাওয়া আর একটি চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে। নথিতে বলা হয়েছে, মৃত্তিকায় অত্যাধিক পরিমাণ লবণ থাকলে তা বাস্তুতন্ত্রে ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে, কারণ মাটিতে লবণের পরিমাণ বাড়লে গাছের বৃদ্ধি বাধা পায়। এছাড়া এটি মিষ্টি জলের প্রাণী যেমন মাছ এবং চিংড়ির জীবনেও সংকট তৈরি করতে পারে।
ছবি সৌজন্যে দ্য হিন্দু পত্রিকা