বিশ্বজিৎ মান্না
পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনে প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব নেই। তবুও ভারত হোক বা বাংলাদেশ, উভয় দিকের সুন্দরবনের মানুষরা আর্থিক দিক থেকে দুর্বল। মূলত কৃষিকাজ ও মাছ চাষ বা মাছ ধরার সাথে যুক্ত রয়েছেন সুন্দরবনের বাসিন্দারা। সেই সাথে রয়েছে পর্যটন। তবে, পরিকাঠামোর অভাবে সুন্দরবন এখনও বিশ্বের পর্যটন মানচিত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে দাগ কাটতে পারেনি। যদিও এখানকার বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীব বৈচিত্রের কথা মাথায় রেখে রাষ্ট্রসংঘের তরফ থেকে সুন্দরবনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তকমা দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনের বাসিন্দাদের অনেক সমস্যা রয়েছে।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর অন্যতম সেরা পর্যটন কেন্দ্র বাংলাদেশের সুন্দরবন
বাংলাদেশের সুন্দরবনের মৎসজীবীদের একটা বড় সমস্যা ছিল দস্যুসের আক্রমণ। বেশ কিছু বছর আগের কথা। সুন্দরবনে পা রাখলেই দস্যুদের নানা কাহিনী কানে ভেসে আসত। বিশেষত সমস্যায় পড়তেন সেখানকার মৎসজীবীরা। নৌকা, ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে গেলেই তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াত সুন্দরবনের কুখ্যাত দস্যুরা। মৎসজীবীদের পণবন্দী হিসেবে ব্যবহার করে তাদের পরিবারের কাছে বিপুল অর্থ দাবি করা হত, যা স্বাভাবিকভাবেই তাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব ছিল না। ততে সেসব এখন অতীত। আপাতত বাংলাদেশের সুন্দরবনে দস্যুদের কোনো উৎপাত নেই। সৌজন্যে সেদেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক মহসিন উল হাকিম।
আরও পড়ুন: ক্ষতবিক্ষত হয়েও প্রাচীরের ভূমিকায় বাংলাদেশের সুন্দরবন
পেশায় একটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক। সুন্দরবনের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা রয়েছে। ইউটিউবে তার একটি চ্যানেলেও রয়েছে। তিনি তার অধিকাংশ সময় সুন্দরবনেই কাটান। সুন্দরবনের মৎসজীবীদের সাথে নৌকা, ট্রলারে করে ছোটো নদী থেকে গভীর সমুদ্র, সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ রয়েছে। ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা নানা ভিডিওর মাধ্যমে সুন্দরবনের মৎসজীবীদের জীবনের নানা দিক তিনি তুলে ধরেন। মৎসজীবীদের সাথেই তিনি নৌকায় খাওয়া-দাওয়া করেন।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে ছাড়া হল কুমিরের ছানা
বাংলাদেশের সুন্দরবনকে দস্যু মুক্ত করতে হাকিম বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। ২০১০ সাল থেকে তিনি জলদস্যুদের এক নেতার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন। তাদের তিনি বুঝিয়ে বলেন, অস্ত্র ত্যাগ করে আলোচনায় বসতে, সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসতে। কাজটা সহজ ছিল না। মহসিনের কথায় জলদস্যুরা প্রথমে রাজি হয়নি। প্রথমে প্রশাসনের তরফ থেকেও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে ধীরে ধীরে তাদের মত পরিবর্তন হয়। বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, সাংবাদিকতার সূত্রে সুন্দরবনের দস্যুদের সাথে তার আলাপ হয়। তিনি নিরপেক্ষভাবে সেই সব প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। কর্মসূত্রে সুন্দরবনে দীর্ঘদিন ধরে যাতায়াতের ফলে জলদস্যুদের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। মোবাইল ফোনে তাদেরর সাথে মহসিনের নিয়মিত কথাবার্তাও হত। দস্যুসের বিশ্বস্ত ব্যক্তি হয়ে ওঠেন এই সাংবাদিক। অস্ত্র ছেড়ে, প্রশাসনের কাছে আত্মসমর্পণ করে, সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসতে দস্যুদের তিনি বোঝান। এবং তাতে তিনি ব্যাপক সফল হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত দেড় শতাধিক জলদস্যু অস্ত্র ছেড়ে আত্মসমর্পণ করেছে।
আরও পড়ুন: সঙ্কটে সুন্দরী, ব্যাহত হচ্ছে সালোকসংশ্লেষ
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে মহসিন বলেন, “এটা আত্মপ্রচারের বিষয় না। সাংবাদিক হিসেবে আমার মনে হয়েছে প্রতিদিনের খবর জোগাড়ের বাইরে যদি কিছু করতে পারি, যাতে দেশের মানুষের কোন উপকার হয়!”