দেড়মাসের মধ্যে মধ্যম তীব্রতার মোট দশটি কম্পন। আর এতেই বিপদের বার্তা দিয়েছেন দেশের প্রথমসারির জিওলজিস্টরা। তারা জানিয়েছেন, দিল্লি সহ ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজন বা এনসিআর এলাকায় বড়সড় ভূমিকম্প হতে পারে। লাইভ মিন্ট ডট কম ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে ওয়াদিয়া ইন্সটিটিউট অব হিমালয়ান জিওলজির প্রধান ড. কালাচাঁদ সাইন বলেন, আমরা সময়, স্থান বা সঠিক পরিমাপ আগাম বলতে পারব না। তবে যে বিষয়টা জানা গিয়েছে যে দিল্লি এবং সংলগ্ন অঞ্চলে ধারাবাহিকভাবে সিসমিক অ্যাক্টিভিটি চলছে। দিল্লিতে বড় ধরণের ভূমিকম্প হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ভূমিকম্প প্রবণ এলাকাগুলির মধ্যে পড়ে দিল্লি। ভূমিকম্প প্রতিরোধের জন্য ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস (বিআইএস) দ্বারা যে নির্দেশাবলী জারি করা হয়েছে, দিল্লির শহরতলি অঞ্চলে বহুতল সহ অন্যান্য নির্মাণের ক্ষেত্রে সেগুলি আদৌ মেনে চলা হয় না বলে অভিযোগে উঠেছে। চিন্তা ঠিক এখানেই। দিল্লিতে শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে কি পরিস্থিতি তৈরি হবে, তা ভেবে এখন থেকেই অনেকে আঁতকে উঠছেন।
দিল্লিতে রিখটার স্কেলে ৫.৫ থেকে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ক্ষয় ক্ষতিটা ঠিক কি মাত্রায় হবে? প্রায়শি জিজ্ঞাস্য এই প্রশ্নের উত্তরে আর্থকোয়েক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিশেষজ্ঞ তথা আইআইটি জম্মুর প্রফেসর চন্দন ঘোষ বলেন, শুক্রবার দুপুরে যে দুটি কম্পন দিল্লিতে অনুভূত হয়, সেগুলির তীব্রতা রিখটার স্কেলে ছিল ৪.৫…তবে এই মাত্রাটা আর একটু বেশি হলেই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হত। রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হলে তা দিল্লির জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। অনেক বিল্ডিং ধুলোয় মিশে যাবে।
চিন্তার আরও একটা কারণ হল বেআইনী নির্মাণ। দিল্লি এবং তার আশপাশ তো বটেই, এমনকি প্রতিবেশি এলাকা নয়ডা ও গুরুগ্রামেও বহু বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে বিআইএস নিয়মাবলী মেনে চলা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। অধ্যাপক চন্দন ঘোষ লাইভ মিন্টের রিপোর্টে আরও বলেন, সবাই জানেন যে দিল্লি-এনসিআর সিসমিক জোন-৪ এর মধ্যে পড়ে। এটি কম্পন প্রবণ এলাকা। বিল্ডিং নির্মাতারা বিআইএস নিয়ম মেনে নির্মাণ করেন না। আর্কিটেক্ট এবং বিল্ডারদের মধ্যে একটি অসাধুচক্র কাজ করে, যেখানে ভূমিকম্প প্রতিরোধক নিয়মবলীর সঙ্গে আপোষ করা হয়। সুতরাং যেকোনো দিন যদি একটা শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়, এর মারাত্মক পরিণাম হতে পারে। জাপানের দিকে তাকান। গোটা দেশটাই সিসমিক জোন-৫ এর মধ্যে পড়ে। ওরা কঠোরভাবে নির্মাণের নিয়মাবলী মেনে চলে। ভালো মানের নির্মাণ রিখটার স্কেলে ৭.৫ অথবা ৮.০ মাত্রার কম্পনও প্রতিরোধ করতে পারে।