সাগ্নিক চৌধুরী
২৫ তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব যার চোখ ধাঁধানো আয়োজন আর উপছে পড়ছে লোকের ভিড়। এক দিক থেকে অন্যদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মানুষের ঢল। একদিকে এই আয়োজনের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে রাজ চক্রবর্তীর নাম ঘোষণা হওয়ার পর অনেকেই নাক কুচকে বলেছেন, ‘এ আবার কি হল?’ তবে সমালোচনার এই হওয়াকে তোয়াক্কা করেন না তিনি। তাই বেশ উদ্যোগ নিয়েই টিকিটের বদলে ফ্রি-পাস থেকে শুরু করে সেলফি জোনের আয়োজন যেমন করা হয়েছে তেমনই এবার চলচ্চিত্র উৎসবে প্রায় ২১৪টি ফিচার ফিল্ম দেখানো হচ্ছে যার মধ্যে ১৫২টি ডকুমেন্টারি ও তথ্যচিত্র যেগুলি প্রায় ৭৬টি দেশ থেকে যেমন ভুটান, আফগানিস্তান, সিরিয়া, গুয়াতেমালা, উরুগুয়ে, লেবানিয়ার থেকে ছবি এখানে এসেছে। দেশের বিদেশের প্রায় বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার যেমন বেরনার্দো বার্তোলুচি, মৃণাল সেন, সত্যজিত রায়, গিরিশ কারনাড, মহম্মদ জাহুর খৈয়াম, স্বরূপ দত্ত, চিন্ময় রায়, বিদ্যা সিনহা ও রুমা গুহঠাকুরতাদের ছবির অসাধারণ সমাহার নিয়ে এসেছে এবারের চলচ্চিত্র উৎসব। ৯ তারিখ থেকে শুরু হয়ে এটি চলবে ১৫ তারিখ পর্যন্ত। অনুষ্ঠানের শুরুর দিন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন শাহরুখ খান, রাখি গুলজার, মহেশ ভাট, গৌতম ঘোষ, অ্যান্ডি ম্যাকডোয়েল। প্রতিদিন আলোচনা সভা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসব চলছে। সমাপ্তি অনুষ্ঠান হবে নজরুল মঞ্চতে শেষ দিন। ১৭টি সিনেমা হলে দেখানো হবে ছবি। এগুলি হল- নন্দন এক, নন্দন দুই, নন্দন তিন, রবীন্দ্র সদন, শিশির মঞ্চ, বিজলি, প্রিয়া, মিনার, নবীনা, অজন্তা, পিভিআর অবনি, আইনক্স সিটি সেন্টার ওয়ান, রবীন্দ্র ও কাকুরা ভবন, নজরুল তীর্থ, নিউ এম্পায়ার, নেতাজী ইনডোর স্টেডিয়াম এবং চলচ্চিত্র শতবর্ষ ভবন। ১৪ নভেম্বর শিশির মঞ্চে সারাদিন অ্যানিমেশন ফিল্ম দেখানো হবে। এছাড়াও ভারতের বিভিন্ন উপভাষা যেমন টুলু, বোরো, বাঞ্জার ভাষার ছবি দেখানো হবে এবার। এবার আশা যাক এক কলসি দুধের মধ্যে এক ফোঁটা চনায়। প্রথমত কোথাকার টিকিট কোথায় পাওয়া যাচ্ছে সে বিষয়ে কেউ তেমনভাবে জানেন না এবং অনলাইন বুকিং বলে তেমনভাবে কিছু নেই। মানে আপনি একটি সিনেমা দেখবেন নন্দন ১-এ তার জন্য ফ্রি-পাশ পাওয়া যেতে পারে রবীন্দ্র সদনের টিকিট কাউন্টারে (এখানে বলা দরকার পাওয়া যাবে কিনা সে বিষয়ে টিকিট কাউন্টারের অধিকর্তাও জানেন না)। কিন্তু সেই টিকিটের জন্য আপনাকে লাইনে দাড়াতে হবে আর সিনেমা শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা আগেই টিকিট পাবেন কাউন্টারে। এছাড়া গিরিশ মঞ্চতে কোনও পাস লাগছে না কিন্তু সিনেমা দেখতে হলে আপনাকে লাইনে দাঁড়াতে হবে আর আপনার ভাগ্য দেবতা যদি প্রসন্ন হন তাহলেই আপনি হলে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। যদিও এটি চলচ্চিত্র উৎসব তবুও এখানে বেশিরভাগ মানুষই ব্যস্ত সেলফি তুলতে। সে না হয় হল, কেননা এটা চলছে সেলফির যুগ। সিনেমা দেখতে আসা এত মানুষের ভিড়ে হয়ত আমরা হাতে গুণে কয়েকজনকে পাব যারা বিদেশী সিনেমা দেখার জন্য অপেক্ষা করেন আর ছুটে আসেন সব কাজ ফেলে। আসলে আজকের নেটফ্লিক্স আর অ্যামাজন প্রাইম বা হইচইয়ের যুগে ল্যাপটপ খুললে যেখানে সব পাওয়া যায় সেখানে শুধুমাত্র ভাললাগার উৎসবের জন্য এত মানুষের ঢল সত্যিই ভাবা যায়না। এ দৃশ্য যেন যুগে যুগে এটাই প্রমাণ করে দেয় ‘বাঙালির আবেগ প্রবণতা ছিল আছে এবং থাকবে চিরকাল’। তাই এই বাঙালি যেন থাকে দুধে ভাতে আর সিনেমাতে।