উত্তর ২৪ পরগনার একটি গ্রাম আটপুকুর। মূলত মৎসজীবীদের বাস এই গ্রামে। গত বুধবারের বিধ্বংসী ঝড় আম্ফান তাদের জীবন, জীবিকাকে তছনছ করে দিয়েছে। প্রকৃতির সেই তাণ্ডবের পর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল সব কিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ার ছবি। গোটা গ্রাম যেন একটা মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। কোথাও সব হারিয়ে পথে বসতে হয়েছে মানুষকে, আবার কোথাও রয়েছে স্বজন হারানোর কাহিনী। যেমন উদাহরণ হিসেবে দেখা যাক কল্পনা মণ্ডলের কথা বলা যেতে পারে। তিন বছরের সন্তানকে কোলে নিয়ে ঝড়ে বিধ্বস্ত কুঁড়ে ঘরের সামনে তিনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন। সাংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিকে দেখে তিনি ভেঙে পড়েন। চোখের জল বাগ মানছিল না। গত বুধবার রাতের ঝড়ে উড়ে আসা একটি অ্যাসবেস্টস এর টুকরো সোজা এসে পড়ে তার স্বামী গোবিন্দ মণ্ডলের ঘাড়ে। এই ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। গ্রামের আর পাঁচটা পুরুষের মতো গোবিন্দ পেশায় মৎসজীবী ছিলেন। তবে অফ সিজনে কলকাতায় দিনমজুরের কাজ করতেন।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পরেই তিনি শহর থেকে গ্রামে ফেরেন। সাইক্লোন আম্ফান আছড়ে পড়ার তিন দিন আগে, অর্থাৎ ১৭ মে তিনি তার স্ত্রী ও সন্তানকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দেন। সাইক্লোনের দিন কল্পনার ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু তার বাবা-মা তাকে আটকে দেন। একদিন পর তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন। ততক্ষণে তার জীবনসঙ্গী গোবিন্দর জীবন অবশ্য চলে গিয়েছে। স্বামীর প্রাণহীন দেহের সামনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন কল্পনা। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, আমি যদি এখানে থাকতাম তাহলে এমনটা হত না। তার তিন বছর বয়সী সন্তানের অবশ্য মৃত্যুর মতো কঠিন বিষয় বোঝার বয়স হয়নি। সে তাই আপন মনে মায়ের কোলে খেলতে থাকে। কল্পনা বলেন, ও (তাদের তিন বছর বয়সী সন্তান) জানে না ঠিক কি হয়েছে। ও এখনও মনে করে যে ওর বাবা পাশের নদীতে স্নন করতে গিয়েছে এবং শীঘ্রই ফিরে আসবে। আমি যদি কাঁদি, তাহলে ও আমাকে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গণ করে। ও শুধু বলতে থাকে যে বাবার সঙ্গে নৌকো নিয়ে বেরোবে।
অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে দাঁড়িও ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া কল্পনা। এখন তিনি একটি কাজের সন্ধান করছেন। তিনি বলেন, আমার ছেলেকে বড় করতে হবে। মানুষ করতে হবে। তাকে আমি কি খাওয়াবো?
তথ্যঋণ- দ্য ক্যুইন্ট