বিশ্বজিৎ মান্না
জীবনে এই প্রথমবার অর্ণব গোস্বামীর সাথে একমত না হয়ে পারছি না। তিনি মেলোড্রামা করেন, নিউজ দুনিয়ার হরনাথ চক্রবর্তী, এরকম অনেক রকম ট্রোলিং হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু সুশান্ত সিং রাজপুতের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর রিপাবলিক টিভির একের পর এক চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন একদম উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সুশান্ত সিং রাজপুত আত্মহত্যা করেছেন, না কী তাকে খুন করা হয়েছে সে বিতর্কে না গিয়ে একটা বিষয় আশা করি সবাই স্বীকার করবেন, আমাদের দেশে রাজনীতির মতো বলিউড স্বজনপোষণের অন্যতম ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। অর্ণব মোটেও ভুল বলছেন না। এর জন্য তার কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলিং করলে সত্যিটা কখনোই মিথ্যে হয়ে যায় না।
একটা কথা বলুন, শাহরুখ খান, সলমন খান, আমির খান, অক্ষয় কুমার সহ বলিউডের তথাকথিত তাবড় তাবড় অভিনেতাদের বিগত পাঁচ বছর ছাড়া মোটামুটি ভালো মাপের কোনো ছবিতে অভিনয় করে দেখাতে পেয়েছেন? বলিউডে অভিনয় কম থাকে, বেশি থাকে নাচ, গান, অযৌক্তিক প্লট, মারপিটের দৃশ্য। যারা অভিনয় বিশেষজ্ঞ, বা অন্তত একটু অভিনয় বোঝেন, নাটক দেখেন, থিয়েটার বোঝেন, তারা এক বাক্যে স্বীকার করবেন, এসব অভিনয় নয়। এক কথায় খ্যামটা নাচ। গান শুনতে হলে, মিউজিক ভিডিও দেখতে হলে আমি কোনো গায়কের গান শুনব বা ভিডিও দেখবো। কিন্তু ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিউজিক বলতে কোনো কিছুই দেখতে রাজি নয় বলিউড। প্লেব্যাক বাদ দিলে অরিজিৎ সিং, সোনু নিগম কতটা জনপ্রিয়? উইজ খালিফাও প্লে ব্যাক করেছেন কিন্তু এর বাইরে তার একটা পরিচয়ও আছে।
তাদের যে প্রতিভা নেই তা নয়। কিন্তু বলিউডের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের নেশার জেরে এদেশে ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিউজিক ক্ষেত্রে সেভাবে বাণিজ্যিকভাবে হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া কেউ সফল হতে পারেননি।
বলিউড ঠিক এতটাই নোংরা। ক্রিয়েটিভ কাজ নিয়ে যদি কথা বলতেই হয়, বলিউডের অর্ধেকের বেশি ছবি কোনো না কোনো দেশি কিংবা বিদেশি সিনেমা থেকে টোকা। প্লট থেকে মিউজিক- সবই টোকা। কেউ কেউ হুবুহু টুকেছেন, কেউ একটু এদিক ওদিক করেছেন। রাজকুমার হিরানি, বিশাল ভরদ্বাজের মতো সামান্য কয়েকজন ছাড়া বলিউডে অরিজিনাল স্ক্রিপ্ট নিয়ে খুব কম চিত্র পরিচালককে কাজ করতে দেখা যায়।
সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, শাহরুখ খান, সলমন খান সহ একাধিক অভিনেতা-পরিচালকের প্রোডাকশান হাউসের তরফ থেকে দিল্লি হাইকোর্টে অর্ণব গোস্বামীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হয়েছে। কারণ সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর না কী তাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার করেছেন অর্ণব এবং রিপাবলিক টিভি। আরে ভাই মানহানি কীসের!
সত্যিটা মেনে নিতে এত অসুবিধা কেন? নাচ, গান, বুব শেকিং ছাড়া বলিউডের ছবিতে কী থাকে? স্লামডগ অতি অখাদ্য সিনেমা। সত্যজিৎ রায়ের পর বলিউড কেন, গোটা ভারতবর্ষে এরকম কোনো চলচ্চিত্র নির্মাতার জন্ম হয়নি যিনি অস্কার জয়ের যোগ্য। অর্ণব মোটেও ভুল কিছু বলেননি। সুশান্ত সিং রাজপুতের অভিনয় দক্ষতা কী ছিল তা জানার দরকার নেই। এটা জানা প্রয়োজন তিনি সামান্য টিভি সিরিয়ালের অভিনেতা থেকে হয়ে উঠেছিলেন বলিউডের প্রথম সারির অভিনেতা। ছিল না তার কোনো গড ফাদার বা বাবা, কাকা বা অন্য কারুর হাত ধরে বলিউডে পা রাখেননি বিহারের সন্তান সুশান্ত। এটা স্বাভাবিকভাবে বলিউডের খান ব্রিগেডের পছন্দ হয় নি। কেউ যে স্ট্রাগল করে প্রতিষ্ঠা অর্জন করতে পারেন, তারা এটায় বিশ্বাস করেন না। সংবাদমাধ্যমের সামনে সব লোক দেখানো ইমেজ তৈরি করেন, সমাজ সেবার নামে ভণ্ডামি আড়াল করার চেষ্টা করেন।
আপনার কী সত্যিই মনে হয় অভিষেক বচ্চন, শাহিদ কাপুর, টাইগার শ্রফ, শ্রদ্ধা কাপুরর মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বাবা যদি বলিউডের প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা না হতেন, তাহলে এত অল্প বয়সে তারা বলিউডের বড় বড় পরিচালকদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেতেন? অভিনয়ের কথা বাদ দিন। বলিউডের তথাকথিত প্রথম সারির অভিনেতা-অভিনেত্রীদের থেকে গ্রামবাংলার যাত্রাপালায় অনেক ভালো অভিনয় দেখা যায়।