কেরিয়ারের শুরুতেই সিম ও স্যুইংয়ের জন্য তাকে বলা হত ভারতের ওয়াসিম আক্রম। তবে তৎকালীন কোচ গ্রেগ চ্যাপেল তাকে ফাস্ট বোলারের পাশাপাশি পিঞ্চ হিটার হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। লোয়ার এবং মিডল অর্ডার তো বটেই, তাকে দিয়ে ভারতের ইনিংস ওপেন পর্যন্ত করানো হয়েছিল। তার নাম ইরফান পাঠান। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম দিনের প্রথম ওভারে হ্যাটট্রিক নেওয়া একমাত্র বোলার।
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, গুরু গ্রেগের আজব কেরামতির মধ্যে না পড়লে, নিজের কেরিয়ারকে আরও দীর্ঘায়িত করতে পারতেন ইরফান পাঠান। ২০১২ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে শেষবার খেলেছিলেন জাতীয় দলের হয়ে। তারপর আর জাতীয় দলের দরজা খোলেনি তার সামনে। আশা ছিল, কোনো একদিন হয়তো অসম্ভবটা সম্ভব হয়ে উঠবে। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হয়নি। তাই কেরিয়ারের শুরুটা যে সম্ভাবনার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল, ইরফান পাঠানের কেরিয়ারের শেষটা ঠিক ততটাই ম্যাড়ম্যাড়ে। দীর্ঘ সাত বছর জাতীয় দলের বাইরে থাকার পর শনিবার সমস্ত ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করলেন বরোদার এই ক্রিকেটার। বরোদার হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে কেরিয়ার শুরু করলেও সম্প্রতি তিনি জম্মু-কাশ্মীর দলের হয়ে খেলছিলেন। বর্তমানে হিন্দি ধারাভাষ্যকার হিসেবেও ইরফান পাঠানের একটা পরিচয় তৈরি হয়েছে।
২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাতে খড়ি হয়েছিল ইরফান পাঠানের। অ্যাডিলেড টেস্টে মাত্র ১৯ বছর বয়সে স্যুইং বোলিংয়ের ঝলকানি দেখাতে শুরু করেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের মাত্র তৃতীয় ওভারেই আউট করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথু হেডেনের মতো আক্রমণাত্মক ওপেনিং ব্যাটসম্যানকে। শুধু বল নয়, ব্যাট হাতেও তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। তাকে এক সময় ভারতের কিংবদন্তী অলরাউন্ডার কপিল দেবের সঙ্গেও তুলনা করা হয়েছিল। ওপেনার হিসেবে দিল্লিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৯৩ রান করে ব্যাট হাতে নিজের দক্ষতার পরিচয়ও দিয়েছিলেন তিনি। তার কেরিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত হল ২০০৬ সালে করাচি টেস্টে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক। এখনও পর্যন্ত ইরফান পাঠান হলেন একমাত্র বোলার যিনি টেস্ট ম্যাচের প্রথম দিনে প্রথম ওভারেই হ্যাটট্রিক অর্জন করেছেন। ২০০৭ সালের দক্ষিণ আফ্রিকায় টি-২০ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ফাইনাল ম্যাচে তিনি হয়েছিলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। ফাইনালে ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন।
২৯ টেস্ট খেলে ইরফান পাঠান সংগ্রহ করেছে ১০০ উইকেট। একটি শতরান ও ছয়টি অর্ধশতরান সহ করেছেন ১ হাজার ১০৫ রান। শেষ টেস্ট খেলেছিলেন ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে।
২০০৪ সালে ওডিআইতে ইরফান পাঠানের অভিষেক হয়। ১২০টি ওডিআই থেকে তিনি মোট ১৭৩টি উইকেট তুলে নিয়েছেন। পাশাপাশি ওডিআইতে ব্যাট হাতে করেছেন ১ হাজার ৫৪৪ রান।