২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে শুরুটা করেছিল রিলায়েন্স জিও। আনলিমিটেড ফ্রি ভয়েস কল। সঙ্গে সস্তার ইন্টারনেট। তার দেখাদেখি অন্যান্য টেলিকম সংস্থাও এই সুবিধা দিতে এক প্রকার বাধ্য হয়। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে গেলে এটা করতেই হত। কিন্তু সেসব এখন অতীত হতে চলেছে।
এবার থেকে টেলিকম সংস্থাগুলি আনলিমিটেড ফ্রি কলের সুবিধা তুলে নিচ্ছে। তার বদলে গ্রাহকদের দেওয়া হচ্ছে পূর্ব নির্ধারিত ফ্রি মিনিট। এই ফ্রি মিনিট শেষ হয়ে যাওয়ার পর মিনিট প্রতি ৬ পয়সা করে দিতে হবে। এয়ারটেল, ভোডাফোন-আইডিয়া এবং রিলায়েন্স জিও আনলিমিটেড ফ্রি ভয়েস কলের সুবিধা আর দেবে না। রবিবার এয়ারটেল এবং ভোডাফোন-আইডিয়া তাদের ট্যারিফ ১০% থেকে ৪৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। চলতি মাসের ৩ তারিখ থেকে প্রি-পেড গ্রাহকদের জন্য এই নয়া ট্যারিফ কার্যকর হবে। উভয় টেলিকম সংস্থা তাদের ন্যূনতম মাসিক এন্ট্রি প্ল্যানের দাম ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৯ টাকা করেছে। রিলায়েন্স জিওর তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ৬ ডিসেম্বর থেকে তাদের অল ইন ওয়ান প্ল্যানগুলির ট্যারিফ ৪০% বাড়ানো হবে। অবশ্য এয়ারটেল এবং ভোডাফোন-আইডিয়া তাদের পোস্ট পেড গ্রাহকদের ট্যারিফ বৃদ্ধি করেনি। পোস্ট পেড গ্রাহকদের মাসে গড় ৪৯৯ টাকার বিল দিতে হয়। সেই কথা মাথায় রেখেই পোস্ট পেড গ্রাহকদের ট্যারিফ বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করেনি এই দুই টেলিকম সংস্থা।
ফেয়ার ইউসেজ পলিসি বা এফইউপি অধীনে টেলকিম সংস্থাগুলি আনলিমিটেড ফ্রি কলের সুবিধা প্রত্যাহার করছে। এক নেটওয়ার্কের গ্রাহক এবার অন্য নেটওয়ার্কের গ্রাহককে ফোন করার সময় আর আনলিমিটেড সুবিধা পাবেন না। যেমন দেখা যাক ভোডাফোন-আইডিয়ার অফার। এই সংস্থার ২৯৯ টাকার রিচার্জে ২৮ দিনের জন্য অন্য নেটওয়ার্কে ১০০০ মিনিটের ফ্রি কল পাওয়া যাবে। এই ১০০০ মিনিট ২৮ দিনের আগেই শেষ হলে, সেক্ষেত্রে অন্য নেটওয়ার্কে ফোন করলে মিনিটে ৬ পয়সা করে কাটা হবে। এয়ারটেলের তরফেও জানানো হয়েছে, তাদের আনলিমিটেড কলিং প্ল্যানে এফইউপি প্রযোজ্য হবে।
তবে একই নেটওয়ার্কে ফোন করার ক্ষেত্রে আনলিমিটিডে ভয়েস কলের সুবিধা থাকছে। জিওর দেখাদেখি অন্যান্য টেলিকম সংস্থা সস্তায় ভয়েস কল এবং ইন্টারনেট পরিষেবা দিতে গিয়ে লোকসান করেছে। তাই ট্যারিফ মূল্য বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। এয়ারটেল এবং ভোডাফোন-আইডিয়ার তরফ থেকে গত ১৮ নভেম্বর জানানো হয়, ডিসেম্বর থেকেই তারা ট্যারিফ মূল্য বাড়াবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় টেলিকম সংস্থাগুলির বাজারে টিকে থাকার জন্য এই মূল্য বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। এয়ারটেলের প্রাক্তন সিইও সঞ্জয় কাপুর বলেন, আমরা এখনও বিশ্বের অন্যতম সস্তার ট্যারিফ মার্কেট। তবে এই ট্যারিফ মূল্য বৃদ্ধির পর নেটওয়ার্কের থেকে গ্রাহকদের প্রত্যাশাও বাড়বে। গ্রাহক পরিষেবার মানোন্নয়ন না হলে টেলিকম সংস্থাগুলিকে ভুগতে হবে। ৪জি টেকিলম ফাইবারকে ভিডিও গ্রেডে পরিণত করতে প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন।
এদিকে টেলিকম সংস্থাগুলির তরফে জানানো হয়েছে, তাদের নেটওয়ার্কের উন্নতির জন্য এই বাড়তি ট্যারিফ মূল্য থেকে পাওয়া অর্থ কাজে লাগানো হবে। ভারতী এয়ারটেলের চিফ মার্কেটিং অফিসার শাশ্বত শর্মা বলেন, আমাদের নতুন মোবাইল প্ল্যানগুলি আমাদের গ্রাহকদের দারুণ মূল্য প্রদান করবে। বিশ্বমানের অভিজ্ঞতা প্রদান করতে আমরা ইমার্জিং টেকনলজি এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এয়ারটেল বিপুল বিনিয়োগ চালিয়ে যাবে।
জিওর তরফেও জানানো হয়েছে, তাদের নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রক্রিয়া চলবে। প্রসঙ্গত, টেলিকম সেক্টরে একমাত্র জিও ছাড়া বাকি সংস্থাগুলির বিপুল পরিমাণ লোকসান হয়েছে।