বিগত কয়েকদিন ধরে সংবাদের শিরোনামে রয়েছেন রিপাবলিক টিভির এডিটর-ইন চিফ অর্ণব গোস্বামী। বিতর্কিত এই সাংবাদিককে একটি পুরানো মামলায় সম্প্রতি গ্রেফতার করে মহারাষ্ট্রের রাইগড় পুলিশ। তবে এই ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক ইন্ধন রয়েছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হয়। সেটা একদম উড়িয়ে দেওয়াও যায় না।
২০১৮ সালে এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন। তিনি সুইসাইড নোটে অর্ণব গোস্বামী সহ আরও কয়েকজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেন। ওই ব্যক্তির অভিযোগ ছিল, অর্ণব সহ বাকিদের কাছে তার বিপুল পাওনা থাকলেও তাকে টাকা দেওয়া হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে তিনি আত্মহত্যা করছেন। দু বছরের সেই পুরানো মামলায় জেল হাজতে ঠাঁই হয় অর্ণবের। যদিও বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি, সম্প্রতি সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর স্বজনপোষণ নিয়ে যেভাবে বলিউডের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন অর্ণব, তারই ফলশ্রুতি হল এই গ্রেফতার। এখানে মাথায় রাখতে হবে, মহারাষ্ট্রের শিবসেনা সরকারের সাথে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়। তাই ব-কলমে অর্ণবকে গ্রেফতার করার মাধ্যমে কেন্দ্রকে উদ্ধব ঠাকারের সরকার বার্তা দিতে চেয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, সুশান্তের মৃত্যুর পর বলিউডের একাংশের বিরুদ্ধে অর্ণব লাগাতার সরব হওয়ায় বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। বলিউডের কিছু প্রযোজক, পরিচালক এবং অভিনেতারা যৌথভাবে অর্ণব সহ বেশ কিছু সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। তাদের দাবি, তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই অর্ণবরা তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন।
তবে আশার খবর হল, বেশ কয়েক রাত জেলে কাটানোর পর অবশেষে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টে জামিন পেয়েছেন অর্ণব। তার হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেন বিশিষ্ট আইনজীবী হরিশ সালভে। যে অভিযোগের ভিত্তিতে অর্ণবকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেটাকেই স্টেপ আউট করে সোজা মাঠের বাইরে পাঠিয়েছেন ভারতের প্রথমসারির এই আইনজীবী। লাইভ ল ডট ইন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, সুপ্রিমকোর্টে সালভে প্রশ্ন করেন, বেতন না দেওয়ার অভিযোগ তুলে কোনো ব্যক্তি যদি আত্মহত্যা করেন এবং সুইসাইড নোটে এর জন্য দায়ী করেন কোনো মুখ্যমন্ত্রীকে, তাহলে কী সংশ্লিষ্ট মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হবে? তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, ইন্ডিয়ান পিনাল কোডের ৩৬০ ধারায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ এক্ষেত্রে অর্ণবের বিরুদ্ধে কোনোভাবেই প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।
সুপ্রিমকোর্টে বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং ইন্দ্র ব্যানার্জীর বেঞ্চের সমীপে চলে সওয়াল-জবাব। অবশেষে ৫০,০০০ টাকার অন্তর্বতীকালীন জামিন পান অর্ণব। এদিন রাতেই জেল থেকে বেরিয়ে হুডখোলা গাড়ি থেকে অনুরাগীদের উদ্দেশে অর্ণবকে হাত নাড়তে দেখা যায়। দেশের সুপ্রিমকোর্টকে সম্মান জানিয়ে তিনি বলেন, এই জয় মানুষের জয়।