আলামিন ফকির। বয়স বছর কুড়ি। বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকার বাসিন্দা। সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করার জন্য পাস জোগাড় করতে হয়। সেই জন্য স্থানীয় এক লেন্ডারের কাছ থেকে তিনি টাকা ধার নিয়েছেন।
তার ১০ সদস্যের প্রতিটি দল মরসুমের শেষে প্রায় ১৫০ লিটার মধু সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়েছে।
আলামিন বলেন, যে বাধা পেরিয়ে আমরা পাস জোগাড় করেছি এবং যে বিপদের সামনে থেকে মধু সংগ্রহ করেছি, সেই দিক থেকে যা দাম পাই তা তুলনা করাই যায় না।
পরবর্তী মধুর মরসুমের আগে পর্যন্ত তার আর কোনো কাজ নেই। তার বাবা খুলনা শহরে রিকশা চালান।
আলামিন বলেন, বছরের অধিকাংশ সময়ে আমাদের কোনো কাজ থাকে না। স্থানীয় লেন্ডারদের কাছ থেকে আমাদের ৭০,০০০ থেকে ১৫০,০০০ টাকা ধার নিতে হয়।
অধিকাংশ ব্যবসায়ী হলেন নলিন বাজারের। সুতারখালি ইউনিয়নের ডাকোপে উপজেলার বাসিন্দা আলামিন।
তারা কাঁকড়া, মাছ, মধু, চিংড়ি, ম্যানগ্রোভের পাতা এবং জঙ্গল থেকে যা কিছু সংগ্রহ করা হয় তা বিক্রি করেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা নৌকা এবং মাঝ ধরার উপকরণ বিক্রি করেন।
বাংলাদেশের অন্যতম দরিদ্র এলাকা হিসেবে পরিচিত নলিন বাজার। সুন্দরবন লাগোয়া এই এলাকায় প্রত্যেক বছর কুমীর, সাপের আক্রমণের পাশাপাশি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে হিমশিম খেতে হয় এলাকার বাসিন্দাদের। কর্মসংস্থানেও প্রবল সমস্যা রয়েছে। তাই স্থানীয় খুলনা এবং বাগেরহাট জঙ্গলে অনেকেই দু পয়সা রোজগারের আশায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে প্রবেশ করেন।
সরকারের তরফ থেকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে অত্যন্ত সীমিত সংখ্যক মানুষ এই সুবিধা লাভ করতে পারেন।
৬০ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা রসুল মিয়া বলেন, তার ভাই কালাম মিয়া সাত বছর আগে বাঘের আক্রমণে মারা গিয়েছেন।
তিনি জানান, এখন আমি ওর পরিবারের দেখভাল করি। আমিও অতীতে বহুবার বাঘের আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছি। ডাকাতদের আক্রমণে আমি আমার দুটো দাঁত হারিয়েছি। তবে আমাকে এই কাজ চালিয়ে যেতে হবে। কারণ আমার কাছে কোনো বিকল্প নেই।
নদী ভাঙনের ফলে রসুল তার জমি হারিয়েছেন। নদীগর্ভে চলে গিয়েছে তার চাষের জমি। সাইক্লোনে বহুবার তাদের বাড়িঘর ভেসে গিয়েছে। নদীবাঁধের কাছে একটি কুঁড়ে ঘরে তিনি বাস করেন। সাত দিনের জন্য মাঝ ধরার ছাড়পত্র জোগাড় করতে পারলে মোটামুটি তাদের তিনজনের টিমের রোজগার হয় প্রায় ৫,০০০ টাকা। তবে সারা বছর মাছ ধরার অনুমতি থাকে না। এর ফলে তাদের রোজগারে ধারাবাহিকতা নেই। বছরের অনেক সময় তাদের কর্মহীন থাকতে হয়।
স্থানীয় সাংবাদিক আবুল বাশার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সুন্দরবনের মানুষ। তারা রুজিরোজগার হারিয়েছেন। তার জীবন-জীবিকার ভাণ্ডারে টান পড়েছে। তার উপরে রয়েছে প্রশাসনের একাংশের দুর্নীতি। ছাড়পত্র দেওয়ার বদলে গরীব মৎসজীবীদের কাছ থেকে অফিসাররা ঘুষ নেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কর্তৃপক্ষ অবশ্য সেসব মানতে নারাজ।
মূল প্রতিবেদনটি ইংরেজিতে বিডি নিউজ ডট কমে প্রকাশিত হয়েছিল।