(দিল্লিতে কর্মরত এক সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপচারিতার ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন লেখা হয়েছে)
পাঁচুগোপাল মান্না
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে গত রবিবার থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দিল্লি। রাজধানীর উত্তর-পূর্বাংশে মূলত গণ্ডগোল হচ্ছে। যেদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতে পা রাখলেন, সেদিন থেকেই হিংসাত্মক ঘটনা বেড়ে গিয়েছে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েকদিনের হিংসাত্মক ঘটনায় মোট ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিন্তার বিষয় হল, মৃতদের মধ্যে অধিকাংশের দেহে বুলেটের চিহ্ন দেখা গিয়েছে।


পরিস্থিতি নিজের চোখে দেখতে সম্প্রতি সেখানে গিয়েছিলেন দিল্লিতে বহুদিন ধরে কর্মরত এক দৈনিক সংবাদপত্রের সাংবাদিক। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় যে ছবি উঠে এল, তা এক কথায় ভয়ঙ্কর। দিল্লির উত্তর-পূর্বাংশে, যেখানে মূলত এই গণ্ডগোল দেখা দিয়েছে, সেটা মূল রাজধানী শহর থেকে বেশ কিছুটা দূরে, যমুনা নদীর কাছে। বুধবারও সেখানে গিয়ে দেখা যায় থমথমে পরিবেশ। একের পর এক জ্বালিয়ে দেওয়া দোকানপাট, গাড়ি, বাইক ইত্যাদির ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে। তারই মধ্যে একটি দৃশ্য দেখে গায়ে কাঁটা দিল ওই সাংবাদিক বন্ধুর।
পুলিশ এবং আরও বেশ কয়েকজন মিডিয়াকর্মীর সঙ্গে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন, সম্ভবত একটি ফলের দোকানে ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়েছিল। তার চিহ্ন এখনও স্পষ্ট। আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দলাপাকানো আপেল, লেবু, কলা ইত্যাদি। তার মধ্যেই দেখা গেল, দলাপাকানো একটি আপেল চেটে চেটে খাচ্ছে রাস্তার একটি কুকুর। দৃশ্যটা দেখে চোখ থমকে যায় ওই সাংবাদিকের। পাশে থাকা পুলিশকর্মীকে তিনি বলে ওঠেন, কুকুর কি আপেল খায়! এ তো তাজ্জব ব্যাপার। এই প্রথমবার দেখছি।


তবে সাংবাদিকের এই বিস্ময় প্রকাশের পর ওই পুলিশকর্মী যে জবাব দিলেন, তা রীতিমতো গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো এবং তা থেকে আরও একবার স্পষ্ট হয়, দিল্লিত গত কয়েকদিনে হিংসার তীব্রতা ঠিক কতটা ছিল। যাইহোক, ওই পুলিশকর্মী বলেন, কুকুর আপেল খায় না ঠিকই। তবে ওই দলা পাকানো আপেল কুকুর চেটে চেটে খাচ্ছে, কারণ তাতে তখনও লেগে রয়েছে রক্ত। প্রায় টাটকা, ডেলা পাকানো, মানুষের রক্ত। পুড়ে ছাই হয়ে, পচে-গলে যাওয়া কালচে লাল রঙের কয়েকশ আপেল, কমলালেবুর রসের সঙ্গে খুব সম্ভবত মিশে গেছে মানুষের রক্ত। সেটাই চাঁটছে কুকুর।
ওই সাংবাদিক মশাই আর কোনো প্রশ্ন করার সাহস পেলেন না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি অন্যান্য সংবাদকর্মীদের সঙ্গে গ্রাউন্ড জিরোতে প্রবেশ করলেন। চারিদিকে পুলিশ আর নিরাপত্ত কর্মীতে ছয়লাপ। প্রত্যেকের পরিচয় এবং পরিচয় প্রমাণের কার্ড দেখার পর তবেই সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।
দিল্লি থেকে ফোনে এই অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলে ওঠেন, আমি যেদিন ওখানে যাই, সেদিন কলকাতায় আমার পরিবারের কাউকে এ ব্যাপারে কিছুই জানাইনি, যে আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। পরে যখন জানালাম, তখন বাড়ির লোকজন প্রচুর বকাঝকা করেছে। কিন্তু কি করব! পেশার তাগিদে তো যেতেই হবে।