বিশেষ প্রতিবেদন
সুপার সাইক্লোনে আম্ফানে বিধ্বস্ত অবস্থা সুন্দরবনের। ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে। তবে বুধবারের সেই ভয়ঙ্কর রাতের কথা মনে পড়লে এখনও শিউরে ওঠেন সুন্দরবনবাসী। এই স্মৃতি ভুলতে তাদের আরও বেশ কিছুটা সময় লাগবে। যেকোনো ঝড়ের প্রথম ঝটকা উপকূলবর্তী এলাকাতেই বেশি তীব্র হয়। তাই সুন্দরবনকেই যেকোনো ঝড়ের প্রথম দাপট সহ্য করতে হয়। পরে তা যখন ধীরে ধীরে মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করে, তখন তার গতি তুলনামূলকভাবে অনেক কমে যায়। শক্তি হ্রাস পায়। ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনাও অনেকটা কমে যায়।
আম্ফানের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। যে ঝড়ের গতি কলকাতায় ছিল ঘন্টায় ১৩০ কিলোমিটারের আশেপাশে, সুন্দরবনে তার গতি ছিল ১৭০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার। ফলে কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকার তুলনায় আম্ফানে সুন্দরবনে বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবে এক ঘন্টার তফাৎ অনেকটাই বাঁচিয়ে দিয়েছে সুন্দরবনকে। নাহলে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে ধ্বংসলীলা আরও বেড়ে যেতো। গত বুধবার যখন সাইক্লোন আছড়ে পড়ে সুন্দবরনে, তার থেকে জোয়ারের তফাৎ ছিল এক ঘন্টা। এই এক ঘন্টার তফাৎ সুন্দরবনকে অনেকটাই বাঁচিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সুপার সাইক্লোন আম্ফানের দাপটে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে সুন্দরবন। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রায় ৯০ কিলোমিটার নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জোয়ার আর আম্ফানের আছড়ে পড়া একসঙ্গে ঘটলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হত, ঠিক যেমনটা হয়েছিল ২০০৯ সালে। ডাউন টু আর্থ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সুন্দরবনের একটি স্কুলের প্রধানশিক্ষক জয়দেব দাস বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টে পর্যন্ত সাগরদ্বীপে তাণ্ডব চালিয়েছে আম্ফান। ঘন্টাখানেক শান্ত থাকার পর প্রথমার্ধের তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধে আরও শক্তিশালী হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এই সাইক্লোন, যা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ছিল।
অন্যদিকে জোয়ার শুরু হয়েছিল বেলা ২.৪৫ নাগাদ। তবে জোয়ারের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছিল রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ। ততক্ষণে সুন্দরবন ছেড়ে উত্তর ২৪ পরগনার দিকে রওনা হয়েছিল ভয়াবহ আম্ফান। ফলে সুন্দরবনের সুপার সাইক্লোনের গতি আর জোয়ারের তীব্রতার মধ্যে সময়ের তফাৎ ছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জোয়ার এবং আম্ফানের প্রভাবে সাগরে রাত ৮.৩৮ মিনিটে জলস্তর ৫.৪৫ মিটার পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল- যা ছিল আগাম অনুমানের থেকে প্রায় ০.৭ মিটার বেশি। এই প্রসঙ্গে জয়দেববাবু বলেন, জোয়ারের এবং ঝড়ের তীব্রতা একই সময়ে উপস্থিত হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হত।
ছবি সৌজন্য ডাউন টু আর্থ ওয়েবসাইট