এবারে কোচবিহারের রাসমেলায় শুরুতেই লেগেছে রাজনীতির রং। রাসমেলার পুজো নিয়ে প্রবল বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক এবার রাজবেশে ঠাকুর মদনমোহনের পুজো দিতে গিয়েছিলেন। এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেছিলেন, সাংসদের এইভাবে পুজো দিতে যাওয়াটা রাজ পরিবারের অপমান।
স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর এই বিষয়ে মুখ খুললেন কোচবিহার রয়্যাল ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সদস্য কুমার বীরাজেন্দ্র নারায়ণ। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে তিনি বিজেপি সাংসদের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, এটা গণতন্ত্র। এখানে যে যেমন খুশী পোশাক পরতে পারেন। বিজেপি সাংসদের রাজার পোশাক পরে মদনমোহনের পুজো দিতে যাওয়ার মধ্যে ভুল কিছু দেখছেন না বীরাজেন্দ্র। তিনি বলেছেন, এটা শুধু তার ব্যক্তিগত বক্তব্য নয়। বরং এটি কোচবিহারের রাজ পরিবারের বক্তব্যও বটে। এর মধ্যে রাজনীতির রং দেখতেও নিষেধ করেছেন বীরাজেন্দ্র। তিনি বলেন, রাজপরিবারের সদস্য না হয়েও রাজার পোশাকে মদনমোহনের পুজো দেওয়ার প্রচলন নতুন কিছু নয়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথবাবুকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহা গত বছর অশৌচ অবস্থায়, রাজার বেশেই মদনমোহনের পুজোয় গিয়েছিলেন। তখন বিষয়টি নিয়ে কেউ কোনো মন্তব্য প্রকাশ করেননি। তাই এবার বিজেপি সাংসদের পুজো দেওয়া নিয়ে কেন এত কথা হচ্ছে সেই প্রশ্নও তুলেছেন বীরাজেন্দ্র। রাজ পরিবারের অপমান প্রসঙ্গে তিনি রাজ্যের বর্তমান শাসকদলকে খোঁচা মেরেছেন। তিনি বলেন, রাজ পরিবারের সদস্যরা এখন তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকুও পায় না। স্থানীয় ক্লাবের অনুষ্ঠান, সাহিত্য সভা থেকে অন্যান্য অনুষ্ঠানে রাজ পরিবারের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানাতে সবার মধ্যে এক প্রকার অনীহা দেখা দিয়েছে। কোচবিহারের রাজ পরিবারের ৪৫০ বছরের ইতিহাস এরাজ্যে পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত হল না। অথচ এই নিয়ে অসমে চর্চা হয় বলেও মনে করিয়ে দিয়েছেন বীরাজেন্দ্র। এরাজ্যে রাজপরিবারের ইতিহাস অবহেলিত হওয়ার পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে রাজবেশে মদনমোহনের পুজো দেওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি না থাকলেও রাজ চক্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানী হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য বীরাজেন্দ্রর। তিনি বলেন, রাজচক্র হল রাজার প্রতীক, স্বতন্ত্রের প্রতীক। এটা নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ ব্যবহার করতে পারেন না।
কোচবিহারের রাসমেলা নিয়ে নিজের আক্ষেপের কথাও প্রকাশ করেছেন রাজ পরিবারের এই সদস্য। তিনি বলেন, এখনও মদনমোহনের পুজোর পর রাসমেলা আরম্ভ হয়। রাসচক্র বংশ পরম্পরায় একজন মুসলিম তৈরি করেন। একজন উড়িয়া ব্রাহ্মণকে দিয়েই মদনমোহনের পসার ভাঙা হয়। এইসব রীতি সব আজও মেনে চলা হয়। সবকিছু বংশ পরম্পরায় চললেও পুজোটা আর বংশ পরম্পরায় হয়না। এটাও তো রাজ পরিবারের অপমান।