বিশ্বজিৎ মান্না
সুপার সাইক্লোন আম্ফান আক্ষরিক অর্থেই সুন্দরবনকে পথে বসিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছে।
একেই করোনাভাইরাসের থাবায় বিপর্যস্ত গোটা দেশ। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জারি করা হয়েছে লকডাউন। এই দমবন্ধ করা জীবনযাপন কবে যে শেষ হবে তা বলা যাচ্ছে না। তার উপর আম্ফান যেন সাধারণ মানুষের সমস্যাকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়ে চলে গেলো। সুন্দরবনের বাসিন্দারা এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে গিয়েছেন। আম্ফান আছড়ে পড়ার পর অঞ্চলের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের টেলি যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। একটি মাত্র বেসরকারী সংস্থার মোবাইল নেটওয়ার্ক ছাড়া কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করছিল না। তাই সুন্দরবনে যে ঠিক কি সমস্যা হয়েছে, গ্রাউন্ড জিরোতে কি ঘটেছে তা অনেকেই জানেন না।
ঠিক কি ঘটেছিল ২০ মে? কাকদ্বীপ মহকুমার পাথরপ্রতিমা ব্লকের দক্ষিণ লক্ষ্মী নারায়ণপুরের বাসিন্দা সত্যজিৎ মান্না বলেন, এই ঝড় আমরা জীবনে এই প্রথম দেখলাম। এখানে বৃষ্টি হয়েছে ছিটে ফোঁটা। কিন্তু হাওয়ার প্রচণ্ড গতিবেগ ছিল। গাছপালা ভয়ঙ্করভাবে দুলছিল। আমি বাড়ি থেকে সেই সময় বাইরে বেরিয়েছিলাম। বৃষ্টির দু চার ফোঁটা আমার গায়ে পড়ার পর আমি একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার লক্ষ করেছিলাম। বৃষ্টির ফোঁটায় একটা লবণাক্ত ব্যাপার অনুভব করেছিলাম, যা সাধারণত বৃষ্টির ফোঁটায় দেখা যায় না।
ঝড়ের তাণ্ডবে যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এই লবণাক্ত বৃষ্টির ফোঁটায় সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাথপ্রতিমার বিস্তীর্ণ এলাকার ছোটো ছোটো গাছপালার পাতা ওই বৃষ্টির পর অনেকটা ঝলসানোর মতো হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ গাছের পাতার যে গাঢ় সবুজ রং থাকে, তা আর দেখা যাচ্ছে না। গাছের পাতার রং বদলে গিয়েছে। মাঠে কৃষকদের শাকসবজি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই বৃষ্টিতে। এক্ষেত্রেও গাছের পাতা ঝলসানোর মতো আকার ধারণ করেছে। আবার কোনো গাছের পাতা ঝরে গিয়েছে। এক্ষেত্রে বলা দরকার, এই প্রভাব মূলত ছোটো ছোটো গাছপালাগুলিতেই বেশি দেখা গিয়েছে।
সত্যজিৎবাবু যেমন বলেন, আমাদের এলাকায় প্রচুর বাবলা গাছ রয়েছে। এর পাতা সাধারণত গাঢ় সবুজ হয়। তবে সেদিনের কয়েক ফোঁটা বৃষ্টির পর এলাকার সমস্ত বাবলা গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়। ওই বৃষ্টির পর যদি আর দু-এক পশলা বৃষ্টি হত, তাহলে হয়তো এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হত না।