গত বুধবারের সুপার সাইক্লোন আম্ফানে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা। জীবন, জীবিকা হারিয়ে পথে বসেছেন বহু মানুষ। ঝড়ে বিধ্বস্ত এরকমই একটি গ্রাম হল উত্তর ২৪ পরগনার আটপুকুর। মৎসজীবীদের এই গ্রামে বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি মাছ চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যাধরী নদীর বাঁধ ভেঙে নোনা জল প্রবেশ করেছে জমিতে। মাছ চাষের পাশাপাশি গ্রামবাসীদের সামনে এখন কৃষিকাজের রাস্তাও বন্ধ।
পুকুর, জলাশয়কে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে বিদ্যাধরীর জল। মিষ্টি জলে মিশে গিয়েছে নোনা জল। গ্রামে যত মাছ চাষ করা হয়েছিল, হয় সেগুলি নোনা জলে মারা গেছে, বা জলের স্রোতে ভেসে অন্যত্র চলে গিয়েছে। গ্রামের সমস্ত পুরুষ মিলে নদীবাঁধ অক্ষত রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন। গ্রামের বাসিন্দা তথা মৎসজীবী কিষাণ বিহারী মাঝি বলেন, আমাদের বাসস্থান, জীবিকা সব চলে গিয়েছে। যারা মাছের ব্যবসায় রয়েছেন তাদের সব কিছু শেষ হয়ে গিয়েছে। গোবিন্দর মতো মাঝিও অফ সিজনে কলকাতায় দিনমজুরির কাজ করেন। তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে আমাদের বাইরের কাজ একদম বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শ্রমিকের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মাছ চাষের কাজও বন্ধ। চারিদিকে শুধু ক্ষতি। লকডাউন হোক বা ঝড়।
গ্রামের আর এক মৎসজীবী দীনেশ দাস বলেন, ২০,০০০-এরও অধিক পরিবার সরাসরি মাছ চাষের উপর নির্ভরশীল। এই পরিবারগুলির বিশাল ক্ষতি হয়েছে। আগামী ২০-২৫ বছরে আমরা এই ক্ষতি পূরণ করতে পারব না। দীনেশ জানান, তার ৪০ বিঘার পুকুরে এখন মাছ নেই। শুধু জল রয়েছে। গ্রামের অধিকাংশ মৎসজীবীর ক্ষেত্রে এটাই ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে।
গ্রামের আর এক মৎসজীবী সুপ্রভাত দাস জানিয়েছেন, আমরা যে শুধু মাছ হারালাম এমনটা নয়। মাছের মরসুম চলে যাওয়ার পর আমরা ধান চাষ করতাম। তবে এখন বাঁধ ভেঙে নোনা জল চারিদিকে প্রবেশ করার ফলে আমাদের সেই সুযোগটাও আর রইল না। চারিদিকে এখন শুধু অনুর্বর মাটি। এতে ধান চাষ করা যাবে না।
গ্রামের সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে সুপ্রভাত জানান, গ্রামে বাস করা ক্রমশ তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, আমার মনে হয় না জীবনে আমি কোনোদিনও এত ভয় পেয়েছি। সেই সাইক্লোনের রাতে আমি যে ভয় পেয়েছি, জীবনে আমি এর আগে এত ভয় পাইনি। টিন, অ্যাসবেস্টস চারিদিকে উড়ছিল। যেকোনো সময় আমাদের উপর দেওয়াল ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা ছিল। সেই ভয় চলে যাওয়ার পর এখন একটা নতুন ভয় আমাদের জীবনে থাবা বসিয়েছে। সেই ভয় হল জীবিকা সন্ধানের ভয়।
তথ্যঋণ- দ্য ক্যুইন্ট