সুন্দরবনের মৌসুনী দ্বীপের বালিয়াড়া গ্রামটাকে যেন নদী গিলে খেতে চায়। জোয়ারের সময় কৃষি জমি এবং বসত বাড়িতে জল ঢুকে যাওয়া এখানে একটি স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। সমুদ্রের ক্রমবর্ধমান জলস্তরকে আটকে রাখার জন্য বালিয়াড়া গ্রাম বরাবর একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৯ সালের সাইক্লোন আয়লার সময় সেই বাঁধ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। তারপর থেকে তিনবার বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে প্রতিবারই জলোচ্ছ্বাসে সেই বাঁধ নিশ্চিহ্ন হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উষ্ণয়নের কারণে সমগ্র বিশ্বে সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে। তবে বঙ্গোপসাগরে এই জলস্তর বৃদ্ধির হার কিছুটা হলেও বেশি বলে মনে হয়। মৌসুনী দ্বীপে প্রায় ৫,০০০ পরিবারের বাস। এদের মধ্যে ২০০০-এরও অধিক বাস করেন বালিয়াড়াতে। এখানকার বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত ভিটেমাটি হারানোর আতঙ্কে ভুগছেন। স্থানীয়রা জানান, নদী ক্রমশ পাড় ভাঙতে ভাঙতে গোটা গ্রামটাকেই গ্রাস করছে। একে একে বাড়ি, জমি সব যেন নদী তার গর্ভে টেনে নিচ্ছে। প্রতি বছর বর্ষায় চিত্রটা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। ১৯৯১ সাল থেকে এই প্রবণতা শুরু হয়েছে। নদীর নোনা জল জমিতে ঢুকে যাওয়ায় কৃষিকাজ এখানে লাভজনক নয়। বালিয়াড়ার বাসিন্দা জসিমুদ্দিন বলেন, আমার ছেলে কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ করে। বাড়িতে টাকা পাঠায়। এই ভাবেই আমরা বেঁচে আছি।
গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই এই কাহিনী। অধিকাংশ বাড়ির পুরুষেরা শহরে শ্রমিক, সিকিউরিটি গার্ড ইত্যাদি কাজে যুক্ত। কারণ গ্রামে থাকলে তাদের পেট ভরবে না। সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়বে। অনেকে স্থায়ীভাবে গ্রাম ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছেন। ইতিমধ্যে দেড় শতাধিক পরিবার গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছে। তারা নিজেদের জমিও বিক্রি করতে পারেননি। কারণ তাদের জমি কেউ কিনতে রাজি হননি। নোনা জল ঢোকায় এই জমিগুলিতে বিশেষ কৃষিকাজ হয় না।
সরকার কিভাবে সাহায্য করেছে ? স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য হিমাংশু আইচ বলেন, জমির মালিকানা যারা প্রমাণ করতে পেরেছিলেন, আয়লার পর ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাদের ১০,০০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
তবে বলাই বাহুল্য, এই সরকারি সাহায্য পর্যাপ্ত নয়।