পিয়ালী মুখার্জী
বলিউডে ভালো থ্রিলার ছবি সংখ্যা সামান্য। তবে সদ্য রিলিজ হওয়া মোহিত সুরির মালাঙ্গের সৌজন্য সেই তালিকা কিছুটা দীর্ঘতর হল বলাই যায়।
গল্পের প্রেক্ষাপটে রয়েছে গোয়া। পর্যটন নির্ভর এই রাজ্যে মাদকের কারবার বহুদিনের সমস্যা, যা এই ছবির মূল বিষয়। ঠিক এই কারণেই, মালাঙ্গ দেখতে দেখতে উড়তা পাঞ্জাব ছবির কথাও মনে পড়তে পারে! দুটি ছবির গল্প পৃথক হলেও, তাদের অন্যতম মূল বিষয় হল মাদকের কুপ্রভাব তুলে ধরা।
ছবির মূল চরিত্রে রয়েছেন আদিত্য রায় কাপুর (অদভিৎ ঠাকুর), দিশা পাটানি (সারা নামবিয়ার), অনিল কাপুর (অঞ্জানি আগাসে), কুণাল খেমু (মাইকেল রডরিগেজ) প্রমুখ। মালাঙ্গের গান বেশ ভালো। ছবির প্রথম দিকের দৃশ্যেই দেখা যায়, জেলের ভিতরে কয়েদিদের উত্তম-মধ্যম দিচ্ছেন আদিত্য রায় কাপুর। এর কারণ বোঝাতে ফ্ল্যাশব্যাকের ঘটনা দেখানো হয়। মালাঙ্গ ছবির সমাগ্রিক ঘটনা ২৪ ডিসেম্বর রাতের।
গোয়াতে বেড়াতে গিয়ে আলাপ হয় অ দভিৎ এবং সারার। প্রথম দেখাতেই প্রেম। দুজনেই জীবনটাকে নিজের শর্তে কাটাতে ভালোবাসেন। ভয়ডরহীনভাবে বাঁচতে পছন্দ করেন। দুজনে একসঙ্গে অনেক সময় কাটান। এই দৃশ্যগুলিতে গোয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মদ্যপান, মাদক, নাইটলাইফ ইত্যাদি দেখানো হয়েছে। সারা যখন বলেন তিনি গর্ভবতী, তখনই হঠাৎ তাকে ছেড়ে চলে যান অদভিত। কিন্তু নিজের ছোটোবেলার বন্ধুকে সস্ত্রীক দেখার পর সারার কথা তার মনে পড়ে। তখন তার খোঁজে অদভিৎ গোয়ায় ফিরে আসেন।
এখান থেকেই অন্যদিকে গল্পটি মোড় নেয়। পুলিশ অফিসার মাইকেল রডরিগেজ ছোটোবেলা থেকেই শুনে এসেছেন, তিনি যথেষ্ট পুরুষালী নন। বিয়ের আগে সহকর্মীদের পাল্লায় পড়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, নিজের ব্যাপারে এই তকমা ঘোচাবেন। বন্ধুদের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী পৌঁছে যান একজন এসকর্টের ডেরায়। কিন্তু তখন সেখানে এসকর্টের বদলে ছিলেন তার বন্ধু সারা। কিন্তু সারাকেই সেই এসকর্ট ভেবে বসেন মাইকেল। সারার দিকে টাকা ছুঁড়ে দেন। সারার প্রতিবাদে মাইকেলের ভুল ভাঙে। তিনি যখন দরজার বাইরে পা রাখতে যাবেন, এমনি সময় সারা বলে ওঠেন, যে পুরুষ মহিলাদের সম্মান করতে জানে না সে আবার পুরুষ নাকি।
সারার এই বাক্যবাণে মাইকেলের সেই ছোটোবেলার কথা ফের মনে পড়ে যায়। নিজের পুরুষত্ব প্রমাণের জন্য তিনি সারার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। অকথ্য অত্যাচার চালান। ইতিমধ্যে দরজার বাইরে এসে হাজির হয়েছেন অদভিৎ। ভিতর থেকে চিৎকার শুনে তিনি দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখেন, সারার উপর অত্যাচার করছেন মাইকেল।
একজন পুলিশ অফিসারের এরকম আচরণ যদি প্রকাশ্যে আসে তাহলে তার কেরিয়ার, সম্মানের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। এই আশঙ্কা থেকে মাইকেল তার আর দুজন সহকর্মীকে নিয়ে সারা ও অদভিতের ঘাড়ে কড়া মাদকের ইঞ্জেকশন দেয়। তারপর সারাকে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। জেলে ঠাঁই হয় অদভিতের। যদিও পরে তিনি ছাড়া পান।
সারা বেঁচে যান। সেই এসকর্ট বন্ধু তাকে বাঁচিয়ে তোলেন। জেল থেকে বেরিয়ে একের পর এক পুলিশ, যারা সারা এবং অদভিতের উপর আক্রমণ চালিয়েছিলেন, তাদের খুন করতে থাকেন অদভিত। গোয়ার একটি পার্টিতে মাদক পাচারকারীর সঙ্গে এনকাউন্টারের মাঝে পড়ে গিয়ে গুলিতে মৃত্যু হয় অনিল কাপুর ওরফে অঞ্জানি আগাসের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে। তারপর মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন এই প্রবীণ পুলিশ অফিসার। সমগ্র ছবিতে আগাসের চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলেছেন অনিল কাপুর। গল্পের হিরো আদিত্য রায় কাপুর হলেও আমার মতে অনিল কাপুর হিরোর চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। এটিই সম্ভবত এখনও পর্যন্ত অনিল কাপুরের জীবনের সেরা অভিনয়। শেষ দোষী পুলিশ অফিসার মাইকেল রডরিগেজকে একাই খতম করেন সারা। টান টান উত্তেজনাপূর্ণ এই ছবির প্রতিটি পরতেই রয়েছে রহস্য। ফলে আপনার চেয়ার ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করবে না।
মোহিত সুরির ছবি মানেই সেখানে বেশ কিছু ভালো গান থাকে। মালাঙ্গের ক্ষেত্রেও কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। টাইটেল ট্র্যাকটি বেশ লাগে। বাকি গানগুলিও মন্দ নয়। ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর আপনার মন ছুঁয়ে যাবে।
তবে মালাঙ্গের মধ্যে বেশ কিছু খামতিও রয়েছে। দিশা পাটানি তার লাস্যময়ী রূপের মাধ্যমে মন জয় করে নিয়েছেন। তবে তার অভিনয় ততটা পরিপক্ক নয়। আশা করা যায়, পরের ছবিতে বলিউডের এই সুন্দরী নিজের অভিনয়ের দক্ষতা আর একটু ঝালিয়ে নেবেন। দিশা পাটানির সঙ্গে আদিত্য রায় কাপুরের প্রেমের শুরুটাও অতি নাটকীয়। এটা একটু অন্যভাবে তুলে ধরলে ভালো হত। ভারতের কোনো রাজ্যেই পুলিশ খুল্লামখুল্লা মাদক সেবন করে না। কিন্তু মালাঙ্গে দেখানো হয়েছে, অনিল কাপুর প্রকাশ্যে মাদক সেবন করছেন। এই অতিরঞ্জন না করাই শ্রেয়। পাশাপাশি সিনিয়র পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করা অনিল কাপুরের হাতে ট্যাটুও দেখা গিয়েছে। এটাও পুলিশের চাকরিতে করা যায় না। তপশীলি জাতি, উপজাতি এবং বিশেষ কিছু সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে উল্কি ছাড়া বাকি সবার ক্ষেত্রে পুলিশ বা সেনাবাহিনীতে চাকরি করতে গেলে শরীরে এমন কোনো স্থানে ট্যাটু করা যায় না, যা প্রকাশ্যে দেখা যায়। এই কয়েকটি খামতি বাদ দিলে, মালাঙ্গ ছবিটি থিয়েটারে গিয়ে একবার দেখে আসতেই পারেন। দশের মধ্যে এই ছবিকে ছয় দেওয়া যায়।
ছবি সৌজন্যে ইন্ডিয়া টিভি।