বিশ্বজিৎ মান্না
সুপার সাইক্লোন আম্ফানে সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের রাঙ্গাবেলিয়াতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এলাকায় নদীবাঁধ ভেঙে গ্রামে বিঘার পর বিঘা জমিতে ঢুকেছে জল। গ্রামবাসীদের কাছে এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হল নদীবাঁধ মেরামত করা। দিন-রাত এক করে তারা পরিশ্রম করে চলেছেন। রাঙ্গাবেলিয়ায় বাঁধ মেরামতির কাজে যুক্ত অর্জুন দে এবং জয়নাল মিস্ত্রি বলেন, “প্রায় চার কিলোমিটার মতো রাস্তা তলিয়ে গিয়েছে। বর্তমানে আপৎকালীন ভিত্তিতে গঙ্গামন্দির এবং জ্যোতিরামপুর ঘাট এলাকার মধ্যে বাঁধের মেরামতি চলছে।”
অর্জুন এবং জয়নাল দুজনেই সাইক্লোনে তাদের বাড়ি হারিয়েছেন। তবে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে যাওয়ার পরে তারা কিভাবে কাজ করার মানসিক শক্তি পেলেন, সেকথা জিজ্ঞাসা করায় জয়নাল বলেন, “আমরা যদি না (বাঁধ মেরামতির কাজ) করি তাহলে কে করবে?” ভোর ৪টে থেকে রাত ৭-৮টা পর্যন্ত তারা কাজ করছেন। তারা জানেন না গ্রাম পঞ্চায়েত তাদের কতটা ক্ষতিপূরণ দেবে। তাদের যা আছে সেটুকু বাঁচিয়ে রাখতে তারা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
ধ্বংস ৬১,০০০ বাড়ি
গোসাবার তৃণমূলের এমএলএ জয়ন্ত নস্কর বলেন, কেবলমাত্র তার নির্বাচনী এলাকার প্রায় ৬১,০০০ বাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “আমি জীবনে এরকম কোনো ঝড় দেখিনি। অকল্পনীয় ক্ষতি হয়েছে। আগামী দিনগুলিতে মানুষজন এখানকার জমিতে চাষ করতে পারবেন না।” গোসাবা ব্লকের আমতলি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত হরিতলা গ্রামেও দেখা গিয়েছে রাঙ্গাবেলিয়ার মতো ধ্বংসের ছবি। বহু এলাাকায় জল ঢুকেছে। বাড়িঘর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাড়ি হারিয়ে শয়ে শয়ে মানুষ এখন আমতলি বীণাপানি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয় শিবিরে থাকা ৫১ বছর বয়সী ভিম ভাঙ্গীর বাড়ি আম্ফান ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, “আমর জীবনে এরকম ঝড় আগে দেখিনি। আমার বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
ভিম জানিয়েছেন, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের সমস্তটাই তিনি তিনটি পুকুরে বিনিয়োগ করেছেন। তিনি বলেন, “সব শেষ। এখন আমার কাছে যা রয়েছে তা হল ৩০০ কেজি মরা মাছ।” গ্রাম পঞ্চায়েতের দেওয়া ত্রিপল টাঙিয়ে তৈরি করা তাঁবুতে বসে ছিলেন লক্ষ্মণ মণ্ডল। তাঁবুর পাশেই নীচু এলাকায় অবস্থিত তার বাড়িটিও ডুবে গিয়েছে। লক্ষ্মণ বলেন, বাংলায় সাইক্লোন আছড়ে পড়ার ছয় দিন পর তিনি প্রথমবার রান্না করা খাবার মুখে তোলার সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমরা ক্যাম্প থেকে শুকনো খাবার পাচ্ছিলাম। কয়েকদিন আগে প্রথমবারের জন্য রান্না করা খাবার খেলাম।”
২০০৯ সালে সুন্দরবনে আছড়ে পড়েছিল আয়লা। তারপর নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে সুন্দরবনের বাসিন্দাদের অনেক বছর কেটে গিয়েছে। আয়লার থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী সাইক্লোন আম্ফান যে তাণ্ডব চালিয়েছে, তাতে আগের পরিস্থিতিতে পৌছাঁনো সুন্দরবনবাসীর কাছে একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ।
তথ্যসূত্র এবং ছবি দ্য অয়্যার